নুসরাত হত্যার রায়, সর্বোচ্চ শাস্তির আশায় পরিবার

18

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার রায় বৃহস্পতিবার ঘোষণা করবেন আদালত। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যা করা হয়েছে ছয় মাসেরও বেশি হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো তার ছায়া রয়ে গেছে পরিবার, স্বজন আর শিক্ষক-সহপাঠীদের মধ্যে। এখনো তার স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান প্রিয়জনেরা। কিছুতেই ভুলতে পারছেন না তারা নুসরাতকে। জন্মদাত্রী মা কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন, অপেক্ষায় আছেন নুসরাতের হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তির। নুসরাতের বাবা-মায়ের কথা একটাই, তারা মেয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি চান। হত্যাকারীদের শাস্তি না দেখা পর্যন্ত তারা শান্তি পাবেন না।
নুসরাত হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আকরামুজ্জামান, আসামিদের পক্ষে ফারুক হোসেন, গিয়াস উদ্দিন নান্নু এবং নুসরাতের পরিবারের পক্ষে আছেন শাহজাহান সাজু।
চাঞ্চল্যকর এই মামলায় উভয়পক্ষের শুনানি শেষ হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর। তারপরই আদালত রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করেন। মামলার বিচারকাজ শুরুর ৬২ দিনের মধ্যে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হয়। এ মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ১৬ জন। এর মধ্যে প্রধান আসামি হলেন- মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ-উদ-দৌলা।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ফেনী সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলীম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে চলতি বছরের ২৬ মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা তার অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ মামলায় গত ২৭ মার্চ পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে গ্রেপ্তার করে। সিরাজ-উদ-দৌলার নির্দেশে মাকসুদ কমিশনার, সাহাদাত হোসেন শামীম তাদের অনুসারীদের নিয়ে অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে সোনাগাজী বাজারে মানববন্ধন করে এবং থানা ঘেরাও করার চেষ্টা করে। একই সঙ্গে সিরাজ-উদ-দৌলার অনুসারীরা নুসরাতকে মামলাটি উঠিয়ে নেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু নুসরাত মামলা উঠিয়ে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
পরে গত ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত আলিমের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসায় গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে ডেকে কৌশলে মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে যায়। পরে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। দগ্ধ নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচ দিন পর ১০ এপ্রিল রাতে মারা যায়। পরদিন ১১ এপ্রিল বিকেলে সোনাগাজীতে জানাজা শেষে নুসরাতকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় নুসরাতের বড়ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল নুসরাতকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। পরে সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়।
পরে এ মামলা তদন্ত করার জন্য পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে গত ২৯ মে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দেন নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. শাহ আলম। এ মামলায় আটক থাকা চার্জশিটের বাইরের পাঁচজনকে বিচারিক আদালত মামলার দায় থেকে অব্যহতি দেন।
অভিযোগপত্রভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ৩০ মে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ১০ জুন আদালত মামলাটি আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত। এরপর ২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী ও নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। এরপর মোট ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জনের সাক্ষ্য নেন আদালত।