নিয়ামতপুরে আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমন ঠেকাতে আলোক ফাঁদ

40

-টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে আমনের ব্যাপক ক্ষতি-

আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমন ঠেকাতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আলোক ফাঁদ করে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। একই সঙ্গে ফসলে কোন পোকা কিংবা রোগ-বালাই দেখা দিলে কি ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণে প্রতিকার পাওয়া যায় সেই ব্যাপারেও পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষিকর্মকর্তারা। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ইউনিয়ন ভিত্তিক ভিডিও চিত্র প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে কৃষি ও কৃষকদের ফসল উৎপাদন ও পোকা দমন নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরে নিয়ামতপুর উপজেলায় ২৮ হাজার ৬শ ৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্ত আবাদ হয়েছে ২৯ হাজার ৯শ ৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ব্রি-ধান-৫১ আবাদ হয়েছে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে। তবে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন যেমন চন্দননগর, ভাবিচা, শ্রীমন্তপুর ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নের কিছু কিছু কৃষকরা বলছেন, গত ১৩ আগস্ট থেকে ভয়াবহ বন্যার ফলে আমাদের এলাকায় রোপা আমনের রোপন করা চারা বেশীর ভাগই নষ্ট হয়ে যায়। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের মতে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে রোপন করা চারা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই অধিকাংশ জমিতে বাড়তি খরচ করে তাদের ২ বার চারা রোপন করতে হয়েছে। এতে করে প্রতি হেক্টর জমিতে খরচ বেড়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। তাদের মতে এবারের বন্যার ফলে মাটিতে পলি জমায় জমি উর্বর হয়েছে। তাই বাড়তি খরচ করেও তাদের মনে আশার সঞ্চার হচ্ছে ভালো ফলন হওয়ার।
ভাবিচা ইউনিয়নের সিদাইন গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, এবারের বন্যার ফলে মাটিতে পলি জমেছে। তাই এখন তার ক্ষেত সবুজের সমারোহ হয়ে উঠেছে। তবে অনেক স্থানেই পোকা ও রোগ-বালাই এর আক্রমন হওয়ায় কিছুটা চিন্তিত রয়েছেন। যদি তার ক্ষেতেও এ রকম পোকা ও রোগ-বালাই এর আক্রমন হয় তাহলে তাকে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
অপর দিকে নিয়ামতপুর উপজেলায় টানা দুদিন ধরে বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলাসহ ৮টি ইউনিয়নের কয়েকশ হেক্টর জমির আমন ধান নুয়ে পড়েছে। তবে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, পানিতে ডুবে না গেলে এসব ফসলের তেমন কোন ক্ষতি হবে না। এদিকে দুদিনের টানা বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষেরা। নিয়ামতপুর ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামের গাজি মিয়া বলেন, আমি ৩ বিঘা আমন ধান লাগিয়েছি। গত দুদিনের টানা বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসে আমার সম্পূর্ন ধান মাটিতে নুয়ে গেছে। একটি ধানের দানাও পাবো না। আমি কিভাবে সংসার চালাবো। ভাবিচা ইউনিয়নের গাবতলী গ্রামের আদর্শ কৃষক ও নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মমতাজ হোসেন বলেন, আমি ৫ বিঘা আমন ধান লাগিয়েছি। এর মধ্যে সর্না-৫ দেড় বিঘা এবং ব্রি-ধান-৫১ সাড়ে তিন বিঘা। সর্না-৫ মোটামোটি ভালই আছে। মাত্র একবার কীটনাশক ব্যবহার করেই কোন পোকার আক্রমন নাই। কিন্তু ব্রি-ধান-৫১ তে এ পর্যন্ত চারবার কীটনাশক ¯েপ্র করতে হয়েছে তবুও ধানের আপোদ বিদায় হচ্ছে না। জানি না শেষ পর্যন্ত কি হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার আমীর আব্দুল্লাহ মো. ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন রকমের আগাম চাষের ধান আবিস্কার হয়েছে। যেগুলো এখনি কাটা শুরু হয়ে গেছে। যেমন বিনা-৭, ব্রি-ধান-৬২, ব্রি-ধান-৫৬, ব্রি-ধান ৪৯। এ ধানগুলো ইতোমধ্যে কাটা শেষ হয়ে গেছে। যদি কৃষকরা এই সমস্ত জাতের ধান বেশি বেশি করে আবাদ করে তাহলে বাদামী গাছ ফড়িং যেটাকে আমরা বলি কারেন্ট পোকা, সেই পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে পারি। তিনি আরো বলেন, অনেক কৃষক অভিযোগ দিচ্ছেন যে কারেন্ট পোকার কোন কীটনাশক বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। কথাটি সঠিক না। বিভিন্ন কোম্পানীর আরো ২৪ প্রকারের কীটনাশক রয়েছে কারেন্ট পোকা দমনের জন্য।
উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন, বিভিন্ন স্থানে আলোক ফাঁদের সাহায্যে পোকার উপস্থিতি সনাক্ত করে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একই সংগে পোকা কিংবা রোগ-বালাই আক্রমন করলে কি ধরণের কীটনাশক বা বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে তার প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে।