বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

Last Updated on মে ২৭, ২০২৫ by

নিজের রেকর্ড ভেঙে ৩১তমবার এভারেস্ট জয় কামি রিতার

বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া এভারেস্টে ৩১তমবার পা রেখে নিজের গড়া আগের রেকর্ডই আবার ভাঙলেন নেপালের পর্বতারোহী কামি রিতা শেরপা। ৫৫ বছর বয়সী এই শেরপা মঙ্গলবার এভারেস্ট জয়ের মধ্য দিয়ে নতুন এই ইতিহাস গড়েছেন। ‘এভারেস্ট ম্যান’ হিসেবে পরিচিত কামি রিতা ১৯৯৪ সালে প্রথমবার বাণিজ্যিক এক অভিযানে কাজ করতে গিয়ে এভারেস্টে উঠেছিলেন। তার পর থেকে প্রায় প্রতি বছরই তিনি পর্বতজয়ের এই কর্মযজ্ঞে অংশ নিয়েছেন। নেপালের বৃহত্তম অভিযান সংগঠন সেভেন সামিট ট্রেকস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এভারেস্টের ইতিহাসে সর্বাধিক ৩১বার এভারেস্ট জয়ের অসাধারণ কীর্তির জন্য কিংবদন্তি কামি রিতা শেরপাকে জানাই বিশাল অভিনন্দন। কামি রিতার আলাদা করে পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি কেবল নেপালের পর্বতারোহণের জাতীয় নায়ক নন, বরং এভারেস্টেরই এক প্রতীক।’ ২০২৪ সালে ২৯তম ও ৩০তমবারের সফল অভিযানের পর এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কামি রিতা বলেছিলেন, ‘আমি কেবল কাজ করছি। রেকর্ডের কথা ভাবি না। রেকর্ড একদিন না একদিন ভাঙবেই। আমি বেশি খুশি এই কারণে যে আমার এই আরোহণ নেপালকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরছে।’ সেভেন সামিট ট্রেকস জানিয়েছে, এবার তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি দলের নেতা হিসেবে অভিযানে অংশ নেন এবং দলের শেষ সদস্যদেরও সফলভাবে শীর্ষে পৌঁছতে নেতৃত্ব দেন। ৫৫ বছর বয়সী কামি রিতা শেরপা ১৯৯৪ সালে প্রথমবার এভারেস্ট জয় করেন। তার পর থেকে প্রতি বছরই যেন শৃঙ্গজয়ের এক নিরবচ্ছিন্ন অধ্যায় রচনা করে চলেছেন তিনি। যারা পর্বতারোহণকে কেবল ক্রীড়া নয়, জীবনদর্শনের এক নিরীক্ষা মনে করেন, কামি রিতা তাদের কাছে এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। নেপালের সলুখুম্বু জেলার থামি গ্রামে জন্ম নেওয়া কামি রিতা বেড়ে উঠেছেন হিমালয়ের কোলে। শৈশব থেকেই তার পরিবার শেরপা গাইড হিসেবে কাজ করত, আর তিনিও বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পেশাদার শেরপা হয়ে ওঠেন। তার এই দীর্ঘ পর্বতারোহণ জীবনে শুধু এভারেস্টই নয়, পৃথিবীর অন্যান্য উচ্চতম পর্বত, যেমন চো ইয়ু, লোৎসে, কাঞ্চনজঙ্ঘা ইত্যাদিতেও সফল অভিযান পরিচালনা করেছেন।
১৫ দিনে চারবার জয়ের নতুন রেকর্ড
এদিকে আরেক নেপালি পর্বতারোহী তাশি গ্যালজেন শেরপা মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে চারবার এভারেস্ট জয়ের নজির গড়েছেন। ৮কে এক্সপেডিশনের তথ্য অনুসারে, তিনি সর্বশেষ গত শুক্রবার শীর্ষে পৌঁছন এবং মঙ্গলবার কাঠমান্ডু ফিরে আসেন।
তাশি গ্যালজেন বলেন, ‘আমি গর্বিত। কাজটা খুবই কঠিন ছিল, কিন্তু সফল হয়েছি। আগে অনেক কিংবদন্তি বহুবার এভারেস্ট জয় করেছেন, কিন্তু এক মৌসুমেই চারবার জয় করার ঘটনা এটিই প্রথম।’
এবার মৃত্যুহার তুলনামূলক কম
এবারের বসন্তকালীন পর্বতারোহণ মৌসুম শেষের দিকে। নেপালের পর্যটন বিভাগ জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ৫০০-এর বেশি পর্বতারোহী ও তাদের গাইডরা শীর্ষে পৌঁছেছেন। এবার তুলনামূলক কম মৃত্যু হয়েছে, এখন পর্যন্ত শুধু দুজন পর্বতারোহীর (একজন ফিলিপিনো ও একজন ভারতীয়) মৃত্যু হয়েছে উঁচু ক্যাম্পে। চলতি মৌসুমে নেপাল সরকার মোট এক হাজার ১০০-এর বেশি পর্বতারোহণ অনুমতি দিয়েছে, যার মধ্যে শুধু এভারেস্টের জন্যই ৪৫৮টি পারমিট ইস্যু হয়েছে। সরকার এতে ৫০ লাখ ডলারের বেশি রাজস্ব আয় করেছে। নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার সেকশনের পরিচালক হিমাল গৌতম বলেন, ‘কামি রিতার এই রেকর্ড শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং নেপালের পর্বতারোহণ খাতকে আরো উচ্চতায় নিয়ে গেছে।’ প্রসঙ্গত, ১৯৫৩ সালে এডমুন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগে শেরপার প্রথম এভারেস্ট জয়ের পর থেকে পর্বতারোহণ বিশ্বজুড়ে এক বাণিজ্যিক শিল্পে পরিণত হয়েছে। গত বছর আট শতাধিক পর্বতারোহী এভারেস্ট জয় করেছিলেন, যার মধ্যে ৭৪ জন ছিলেন উত্তর তিব্বতের দিক থেকে। এ ছাড়া চলতি মাসের শুরুতে ব্রিটিশ পর্বতারোহী কেনটন কুল এভারেস্ট জয় করেছেন ১৯তমবার, যা একজন অনেপালি হিসেবে সর্বোচ্চ।

About The Author

শেয়ার করুন