শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

Last Updated on জুন ৩০, ২০২৫ by

নাচোলে ‘সম্প্রীতি ও উন্নয়নের’ পুকুরের লিজ বাতিলের দাবি
বরেন্দা গ্রামের নামে দিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি এলাকাবাসীর

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বরেন্দা গ্রামের ‘সম্প্রীতি ও উন্নয়নের’ খাসপুকুর নিয়ে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর নিয়মবহির্ভূত লিজ প্রাপ্তির বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে গ্রামবাসী। উল্লেখ্য, পুকুরটি স্থানীয়ভাবে ‘সুতিহার দিঘি’ নামে পরিচিত।
সোমবার সকাল ১০টায় নাচোল বাসস্ট্যান্ড মোড়ে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
‘জনউন্নয়নে জনউদ্যোগে বাধা দেওয়া চলবে না’— এই দাবিকে সামনে রেখে গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার হাতে নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন।
মানববন্ধন শেষে একটি মিছিল উপজেলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপির অনুলিপি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে দেয়া হয়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রেরণ করা হয়।
এই কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন— বরেন্দা গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান, বরেন্দা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি কাদের আলী, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেত্রী বিচিত্রা তির্কি, বিভাগীয় আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি সুভাস হেম্রম, গ্রামের প্রতিনিধি নূর নবী ইসলাম এবং মৎস্যজীবী কমিটির সদস্য তাজউদ্দীন আহমদ ফাতিক।
বক্তারা বলেন, “এই খাসপুকুরটি আমাদের গ্রামের সম্পদ। সরকারি নিয়মনীতি মেনে দীর্ঘদিন ধরে লিজ নিয়ে আমরা এই সম্পদকে জনকল্যাণে ব্যবহার করে আসছি। বরেন্দা গ্রামে ৩৫০টি হিন্দু, মুসলিম ও আদিবাসী পরিবারের মিলিত বসবাসে এই পুকুর কেবল একটি জলাধার নয়— এটি গ্রামীণ সম্প্রীতি, সহাবস্থান ও উন্নয়নের প্রতীক।”
তারা জানান, এই পুকুর থেকে আয়কৃত অর্থ দিয়ে বরেন্দা গ্রামে মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ, শ্মশান, কবরস্থান, রাস্তা, স্কুলসহ নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ পরিচালিত হয়। প্রান্তিক ও গরিব পরিবারগুলোকে সংকটকালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় এই পুকুরের আয়ের অংশ থেকে। এটি কোনো ব্যক্তিগত সম্পদ নয়— পুরো গ্রামই এই পুকুরের সুবিধাভোগী।
বক্তারা আরো বলেন, “পুকুরের পানি গৃহস্থালি ও কৃষিকাজে ব্যবহার করে গ্রামের মানুষ। এমনকি খরার সময় ফসল বাঁচাতে এখানকার পানি ব্যবহার করা হয়। এই একটিমাত্র পুকুরে পুরো গ্রাম উপকৃত হচ্ছে। নাচোল উপজেলায় আরো অনেক খাস পুকুর রয়েছে, কিন্তু সেগুলোর কোনোটিই আমাদের মতো জনগণের উদ্যোগে জনউন্নয়নের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে না— এটাই একমাত্র ব্যতিক্রম উদাহরণ।”
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “হঠাৎ করে প্রশাসন এ বছর কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আমাদের গ্রামের সংগঠনকে লিজ না দিয়ে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরের একটি সংগঠনকে সম্পূর্ণ গোপনে লিজ প্রদান করেছে, যা জলমহাল নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আইনবহির্ভূত। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দাবি করছি— অবিলম্বে এই লিজ বাতিল করে পুনরায় বরেন্দা গ্রামের সংগঠনের নামে নিয়ম অনুযায়ী লিজ প্রদান করতে হবে।”
গ্রামবাসীরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “আমাদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষিত হলে আমরা বৃহত্তর গণআন্দোলনের দিকে যেতে বাধ্য হবো।”
এ বিষয়ে নাচোল উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নীলুফা সরকার বলেন, লিজ সংক্রান্ত বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সরেজমিনে এসে দিঘিটি পরিদর্শন করেছেন এবং বিভাগীয় পর্যায়ে আইনের মাধ্যমে লিজ বাতিলের জন্য গ্রামবাসীকে আবেদন করতে বলেছেন।

About The Author

শেয়ার করুন