রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৬ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

Last Updated on ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৫ by

নাচোলে কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তুলা চাষ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঠা ঠা রুক্ষ লাল মাটি হিসেবে খ্যাত বরেন্দ্র অঞ্চলে এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কার্পাস তুলাচাষ। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় তুলাচাষে ঝুঁকে পড়ছেন কৃষকরা। উপজেলায় এবার প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে তুলার চাষ হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, তুলাগাছগুলোয় ফুটে আছে সাদা ফুল। ছড়াচ্ছে মনজুড়ানো শুভ্রতা। তুলার খেত শুধু আনন্দই দিচ্ছে না, কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসিও ফুটিয়েছে। ভালো ফলন ও ভালো দাম পেয়ে কৃষকদের মুখে হাসির এই ঝিলিক দেখা দিয়েছে।
নাচোল উপজেলার কসবা ইউনিয়নের কাজলা গ্রামের তুলাচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন গত ১৪ বছর থেকে তুলা চাষ করে আসছি, কারণ অন্য ফসলের চাইতে তুলা চাষে খরচ কম, লাভ বেশি।
আখিলা গ্রামের বাইরুল ইসলাম বলেন, আম গাছের মধ্যে তুলা চাষ করে আমি অনেক লাভবান হয়েছি। আপনাদের রিপোর্টের মাধ্যমে সবার কাছে পৌঁছে যাক আমাদের তুলা চাষের কথা। বিঘাপ্রতি ১২ থেকে ১৫ মণ ফলন হয়। যার আনুমানিক মূল্য ৫০থেকে ৬০হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিলেও ৩৫থেকে ৪০হাজার টাকা লাভ হয়। এ কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা তুলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। গত বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি জমিতে বেড়েছে তুলা চাষ।
রাজশাহী জোনের নাচোল ইউনিটের কটনিউটার অফিসার বিশ্বজিৎ বর্মন জানান, বরেন্দ্রভূমির উঁচু জমি, যেগুলোতে সেচসুবিধা নেই বা কম ফসল হয়, সেসব জমিই তুলা চাষের উপযোগী। খরাপ্রবণ বরেন্দ্রভূমিতে সেচ ছাড়া বা কম সেচের ফসল চাষের উপযোগী। অন্যদিকে কোনো দুর্যোগের কবলে পড়ে না বললেই চলে। প্রচলিত অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক। তুলা বিক্রির জন্যও ক্রেতা খুঁজতে হয় না, বরং ক্রেতারাই আসেন চাষিদের দোরগোড়ায়। ফলে তুলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষক। জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তুলা চাষ। তুলা চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বাড়ানো হয়েছে প্রদর্শনী প্লটও।
নাচোল উপজেলা কৃষি অফিসার সলেহ আকরাম জানান, এবার নাচোল উপজেলায় প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে দেশী হাইব্রিড ও দিবে হোয়াইট গোল্ড নামের দুটি তুলার জাত চাষাবাদ হয়েছে। গড় ফলন ১২ থেকে ১৫ মণ পাওয়া যায়। আগস্ট মাসে তুলার বীজ ছিটিয়ে অথবা সারি বদ্ধভাবে লাগানো হয়  এবং ৬মাস পর তুলা ঘরে তোলা যায়।
প্রসঙ্গত, বৃষ্টির পানির ওপর ফসল চাষাবাদে নির্ভরশীল ছিলেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। আশির দশক থেকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষের গভীর নলকুপের অশীর্বাদে সেচের পানি পাওয়ায় সেই লাল রুক্ষ মাটিতে এখন ফলছে সোনার ফসল। বছরে দুটি ধানসহ গম, সরিষা, মসুর, ছোলাসহ বিভিন্ন ফসল উৎপন্ন হচ্ছে। পাশাপাশি হয়েছে সবুজায়নও। তবে ধান, গমসহ অন্যান্য দানাদার খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি অনেক তরুণ উদ্যোক্তা এগিয়ে আসেন ফল চাল চাষে। এর ফলে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সম্প্রসারিত হয়েছে আম বাগান। চাষ হচ্ছে পেয়ারা ও বরইয়ের। এসব সম্ভব হয়েছে বরেন্দের সেচ সুবিধার কারণে। তবে ভূগর্ভের পানির অধিক ব্যবহারের ফলে পানির স্তর ভয়াবহ হারে নিচে যাওয়ায় এবছর জেলার ৮টি ইউনিয়নে বোরো ধান আবাদ থেকে কৃষকদের বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

About The Author

শেয়ার করুন