শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

Last Updated on নভেম্বর ১০, ২০২৪ by

নরওয়েতে টেকসই উপায়ে স্যামন মাছের চাষ

অন্যান্য অনেক কারণের পাশাপাশি নরওয়ে সুস্বাদু স্যামন মাছের জন্যও বিখ্যাত। বড় আকারে সেই মাছের চাষকে ঘিরে কিছু জটিলতা ও সমস্যা রয়েছে। এক তরুণ উদ্যোগপতি পর্যটকদের কাছে নরওয়ের ফিয়র্ড বড় আকর্ষণ। সেখানে নতুন ধরনের এক স্যামন ফার্ম ভিন্নভাবে কাজের অঙ্গীকার করছে। নরওয়ে গোটা বিশ্বের প্রায় অর্ধেক স্যামন উৎপাদন করে। টোমাস মিরহল্ট আকভাফিউচার কোম্পানির কর্ণধার, যেটি সেই ফার্ম চালায়। সুযোগ পেলেই তিনি দফতর ছেড়ে টিমের সঙ্গে ফিয়র্ডে কাজে হাত লাগান। তিনি বলেন, ‘‘আমরা স্যামন মাছ চাষের নতুন উপায় খোঁজার চেষ্টা করছি। বিশ্বের সবচেয়ে টেকসই স্যামন ফার্মিং সৃষ্টি করাই আমাদের অলীক স্বপ্ন। সি লাইসের মতো সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আগেই আমরা সক্রিয়ভাবে সেটা এড়াতে চাই। যাতে এখানে একেবারেই কোনো সামুদ্রিক উকুন না আসে। প্যাথোজেন মোকাবিলা ও মাছের সুরক্ষাও আমাদের কাছে জরুরি।”প্রচলিত ফার্মে প্যারাসাইট বা পরজীবী বড় সমস্যা। বিশেষ করে সি লাইস নামের ক্ষুদ্র ক্রাস্টেসিয়ান জাতের জীব বড় আকারে তাদের হোস্টের মৃত্যু ঘটাতে পারে। সেই প্যারাসাইট ওয়াইল্ড অ্যাটলান্টিক স্যামন মাছের মধ্যেও সংক্রমিত হতে পারে। গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে সেই মাছের সংখ্যা ৫০ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। পরিবেশবিদদের মতে, সেটা একটা বড় সমস্যা। এনএনভি পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিনিধি কাইয়া লাংভিক-হানসেন বলেন, ‘‘সি লাইস শুধু সাধারণ স্যামন নয়, ওয়াইল্ড স্যামনের জন্যও বড় সমস্যা। এই এলাকায় সেটা হলো অ্যাটলান্টিক স্যামন। এই প্রাণী সবসময়ে হুমকির মুখে রয়েছে। এই মাছের সংখ্যা নাটকীয় মাত্রায় কমে গেছে।”আরেকটি সমস্যা হলো, খামারের মাছ প্রায়ই জালের ফাঁক দিয়ে পালিয়ে যায়। অ্যাটলান্টিক স্যামনের সঙ্গে সেই মাছের প্রজনন ঘটলে শাবকগুলির পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়। ফলে গোটা মহাসাগরে এই মাছের সংখ্যা আরো কমে যায়। তাছাড়া অ্যাকোয়াকালচার থেকে বেরিয়ে আসা বিষ্ঠা আশেপাশের পানিতে প্রায়ই দূষণ ঘটায়। ফলে মাছের মধ্যে ত্বকের রোগ ছড়িয়ে পড়ে। প্রশ্ন উঠছে, এই খামার অন্যগুলির তুলনায় কতটা ভিন্ন? আসলে সেটির নির্মাণের মধ্যেই এর চাবিকাঠি রয়েছে। জাল দিয়ে ঘেরার বদলে মাছের গতিবিধির সীমা হিসেবে সেখানে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। টোমাস মিরহল্ট বলেন, ‘‘সুরক্ষার স্বার্থে এক বন্ধ ব্যাগের মধ্যে মাছ রাখা হয়। আমরা গভীর সমুদ্রের পানি দিয়ে সেই ব্যাগ ভরে দেই। সেই তাজা পানিতে সি লাইস থাকে না।” ২০২৩ সালে নরওয়েতে ফার্মের স্যামন মাছের মৃত্যুর হার ছিল ১৭ শতাংশ। সংক্রামক রোগ এর অন্যতম প্রধান কারণ। রোগ সংক্রমণের নি¤œ হারের দৌলতে এই খামারে সেই হার মাত্র চার শতাংশ। কোম্পানির কর্ণধার স্বয়ং নীচে বসানো ফিল্টার সিস্টেম দেখালেন। হলে পাম্প ইউনিট তৈরি করা হয়, যেগুলি পরে ওয়েল্ডিং করে জোড়া দেওয়া হয়। সেই হাইটেক ফিল্টারের সত্ত্ব কোম্পানির হাতেই রয়েছে। টোমাস মিরহল্ট বলেন, ‘‘সাগরে কী ভেসে বেড়াবে, এটি তা নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যেই কাদা সংগ্রহ করা হয়। মরা মাছ থাকলে সেখানেই সেটা সংগ্রহ করে তীরে নিয়ে গিয়ে অন্য কোনো ভ্যালু স্ট্রিমে কাজে লাগানো হয়।” আকভাফিউচার কোম্পানি জানাচ্ছে, তারা মুনাফা করছে। তাদের স্যামন মাছের মূল্যও নাকি প্রচলিত স্যামন মাছের মতোই। ফিল্টারের মাধ্যমে ছেঁকে নেওয়া কাদামাটির ভিন্ন ব্যবহারও ব্যয় কম রাখতে সাহায্য করছে। কমপক্ষে এই মুহূর্তে স্যামন শিল্পখাত তরুণ এই উদ্ভাবনী কর্ণধারের পদ্ধতি সম্পর্কে সংশয় দেখাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, তাঁর প্রচেষ্টা কি স্যামন চাষের ক্ষেত্রে স্থায়ী ও টেকসই পরিবর্তন আনতে পারবে? টোমাস মিরহল্ট যথেষ্ট আশাবাদী। তিনি এরই মধ্যে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছেন।

About The Author

শেয়ার করুন