ধাওয়ান-কোহলির শতকের পরও ভারতের হার

61

during the Victoria Bitter One Day International match between Australia and India at Manuka Oval on January 20, 2016 in Canberra, Australia.

আগের তিন ম্যাচে একটি করে শতক থাকার পরও জিততে পারেনি ভারত। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চতুর্থ ওয়ানডেতে দুই জন ব্যাটসম্যান শতক করার পরও সেই হারের বৃত্তেই রয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। অ্যারন ফিঞ্চের শতকের পর কেন রিচার্ডসনের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে দারুণ এক জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
২৫ রানের এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আগামী শনিবার সিডনিতে হবে পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডে।
ক্যানবেরার ম্যানুকা ওভালে বুধবার টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ৩৪৮ রান করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে চার বল বাকি থাকতে ৩২৩ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারত।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রোহিত শর্মার সঙ্গে ৬৫ রানের উদ্বোধনী জুটিতে ভারতকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন শিখর ধাওয়ান। ২৫ বলে ৪১ রান করে রোহিত ফিরে গেলে ভাঙে ৮ ওভার স্থায়ী জুটি।
দ্বিতীয় উইকেটে ধাওয়ান-কোহলির ২১২ রানের বিশাল জুটিতে এক সময়ে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় ভারত। ২৯.৩ বল স্থায়ী দ্বিতীয় উইকেট ভেঙে স্বাগতিকদের ম্যাচে ফেরান জন হেস্টিংস।
হেস্টিংসের বলে জর্জ বেইলিকে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ১২৬ রান করেন ধাওয়ান। এই ইনিংস খেলার পথে ভারতের হয়ে দ্রুততম তিন হাজার রানে পৌঁছানোর রেকর্ড গড়েন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ৭২ ইনিংসে তিন হাজার রানে পৌছান ধাওয়ান, ৭৫ ইনিংসে এই রান করে রেকর্ড গড়েছিলেন কোহলি।
নবম শতক পাওয়া ধাওয়ানের ১১৩ বলের ইনিংসটি সাজানো ১৪টি চার ও দুটি ছক্কায়।
সেই ওভারে ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকেও ফিরিয়ে দেন হেস্টিংস। আর এরপর ভারতের মিডল অর্ডার ধসিয়ে দেন রিচার্ডসন।
এক রান পরেই ফিরে যান শতক পাওয়া আরেক ব্যাটসম্যান কোহলি। রিচার্ডসনের বলে স্টিভেন স্মিথের হাতে ধরা পড়ার আগে ১০৬ রান করেন ভারতের টেস্ট অধিনায়ক। তার ৯২ বলের ইনিংসটি ১১টি চার ও একটি চার সমৃদ্ধ।
এই ইনিংস খেলার পথে ভারতের ব্যাটিং কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকারকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে কম ইনিংসে (১৬২) ওয়ানডেতে ২৫ শতক করার রেকর্ড গড়েন কোহলি। ২৫ শতক করতে টেন্ডুলকার খেলেছিলেন ২৩৪ ইনিংস।
এক সময়ে ভারতের স্কোর ছিল ১ উইকেটে ২৭৭ রান। পরের ৩৭ বলে ৩১ রান যোগ করতে ছয় উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে পড়ে অতিথিরা।
ভারতের আশা বাঁচিয়ে তখনও ক্রিজে ছিলেন রবিন্দ্র জাদেজা। শেষ পর্যন্ত ২৪ রানে অপরাজিত থাকলেও ভারতের হার এড়াতে পারেননি তিনি।
৬৮ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলার রিচার্ডসন। ১১ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে এই প্রথম পাঁচ উইকেট পেলেন তিনি।
এর আগে শুরুটা দারুণ করে অস্ট্রেলিয়া। ডেভিড ওয়ার্নার ও ফিঞ্চ উদ্বোধনী জুটিতে ১৮৭ রান এনে দেন স্বাগতিকদের।
১০৭ বলে ৯টি চার ও দুটি ছয়ে ১০৭ রান করেন ফিঞ্চ।
ভারতের বিপক্ষে শতকটি করার পথে ওয়ানডে ক্রিকেটে ২ হাজার রানও পূর্ণ করেন ফিঞ্চ। ২ হাজার রান করতে তিনি ইনিংস খেলেন ৫৪টি। দুই হাজার রানের মাইলফলক পেরোতে তার চেয়ে কম ইনিংস খেলা অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান আছেন আর দুজন।
হেইডেন ওয়ানডেতে ২ হাজার রান করেছিলেন ৫৩ ইনিংস খেলে। আর ডেভিড বুনের লেগেছিল ৫২ ইনিংস। গ্রেগ চ্যাপেল আর জর্জ বেইলি ২ হাজার রান পূর্ণ করতে খেলেন ফিঞ্চের সমান ৫৪টি করে ইনিংস।
দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পর পর এই প্রথম ব্যাট করতে নামা ওয়ার্নার ৭ রানের জন্য শতক পাননি। ১২টি চার ও একটি ছয়ে ৯২ বলে ৯৩ রান করেন তিনি।
দুই উদ্বোধনী ব্যাটম্যানের বিদায়ের পর ৬৭ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও মিচেল মার্শ (৩৩)। দলের তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোর অধিনায়ক স্মিথের। ৪টি চার ও ৩টি ছয়ে ২৯ বলে ৫১ রানের ঝড়ো এক ইনিংস খেলেন তিনি।
পর পর দুই ওভারে এই দুই ব্যাটসম্যানের আউটের পর দ্রুত বেইলি, জেমস ফকনার ও ম্যাথু ওয়েড ফিরে গেলে মনে হচ্ছিল সাড়ে তিনশতে পৌঁছতে পারবে না স্বাগতিকরা।
তবে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ২০ বলে ৪১ রানে ভারতকে সাড়ে তিনশ’ ছুঁই ছুঁই লক্ষ্য দিতে পারে অস্ট্রেলিয়া।
৪ উইকেট নিয়ে ভারতের সফলতম বোলার ইশান্ত শর্মা। তবে এর জন্য ১০ ওভারে ৭৭ রান দিতে হয় এই পেসারকে। ৬৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন উমেশ যাদব। তবে রানের গতি আটকাতে না পারায় অস্ট্রেলিয়া ঠিকই জয়ের মতো বড় সংগ্রহ গড়ে তোলে।
তবে এই লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে এক সময়ে ৭২ বলে ৭২ রান দরকার ছিল ভারতের, হাতে ছিল ৭ উইকেট। কিন্তু রিচার্ডসনদের দারুণ বোলিংয়ে আপাত সহজ সেই কাজটি করতে না পারায় আরেকটি হার এড়াতে পারেনি ভারত।