প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের একটি ঘরও অন্ধকার থাকবে না। প্রতিটি ঘর পর্যায়ক্রমে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে। এটা আমাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। ২০২১ সাল নাগাদ প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো যাবে। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে বিদ্যুতের ব্যবহারকারী ছিল ৪৭ ভাগ, আজ ৯৭ দশমিক ৫০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ৩১টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিতকরণে দুটি পাওয়ার প্ল্যান্ট, ১১টি গ্রিড সাব-স্টেশন, ছয়টি নতুন সঞ্চালন লাইন উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী এর আগে ২৫৭টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এই ৩১টি উপজেলায় উদ্বোধনের পর মোট ২৮৮টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আসলো। এর ফলে দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না সেখানে আমরা সোলারের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বিশেষ করে চরাঞ্চলে সোলার ব্যবহার যাতে নিশ্চিত হয় সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৮ লাখ সোলার দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ¦লবে। ’২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। দিন যতই যাচ্ছে বিদ্যুতের ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে তৈরি করেছি। ফলে গ্রামগঞ্জে পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারপ্রধান বলেন, গ্রামের মানুষ যেন সকল সুযোগ-সুবিধা পায়, সে বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে। শুধু শহরের মানুষকে সুযোগ-সুবিধা দিলে হবে না, গ্রামে এখন অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। আমরা বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরেন, আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রচুর টাকা ভর্তুকি দিচ্ছি। এ সময় বিদ্যুৎ ব্যবহারে সতর্ক হওয়া ও অপচয় না করার আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামের মানুষও যাতে বিদ্যুৎ পায় সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকার ভর্তুকিসহ সব ধরনের সহযোগিতা করছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন দেশের মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অনুযায়ী আমরা রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎসহ সব কিছুর উন্নয়ন করছি যেন বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটে। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে দেখা যেত বাজেটের আগে গোপালগঞ্জের উন্নয়নের কথা বলা হতো। কিন্তু বাজেটের সময় দেখা যেত সেই টাকা কোথায় জানি চলে গেছে। গোপালগঞ্জে বিদ্যুৎ পেতাম না। জেনারেটর চালিয়ে বাতি জ¦ালাতে হতো। আমরা সেভাবে কোনো জেলার উন্নয়ন করি না। তার একটি দৃষ্টান্ত আজ দেখা যাবে। বগুড়া জেলায় ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করা হচ্ছে। এ ছাড়া ওই জেলার মহাস্থানগড় ও শেরপুরে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
তিনি বলেন, ২০২১ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সারাদেশে ইকোনমিক জোন করা হচ্ছে, সেখানে বিদ্যুৎ দেয়া হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবেই এ উদ্যোগ। গ্রামকে শহরে রূপান্তর করা হবে। সব সুযোগ-সুবিধা যাতে সেখানে পাওয়া যায় সেদিকে নজর দেয়া হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। শহর আর গ্রামের মধ্যে যেন পার্থক্য না থাকে। গ্রামের মানুষ যেন শহরের সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়। শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করতো এবং ইন্ডাস্ট্রি চালাত একসময় বিদ্যুতের জন্য তাদের মধ্যে হাহাকার ছিল। তাদের জেনারেটর দিয়ে এসব শিল্প-কলকারখানা পরিচালনা করতে হতো। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই একটা দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। আমাদের প্রচেষ্টা ছিল সার্বিক উন্নয়নে কাজ করব। ’৯৬ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন বিদ্যুতের অবস্থা খুব করুণ ছিল। আমরাই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে বিদ্যুতের উন্নয়নে কাজ শুরু করেছিলাম।
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। যেখানে গ্যাস আছে সেখানে গ্যাস দিয়ে আর যেখানে কয়লা আছে সেখানে কয়লা দিয়ে উৎপাদন করছি। দিনাজপুরে আমরা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করি। বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরতদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করছেন বলেই আজ বিদ্যুৎ বিভাগে উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে। নোয়াখালীতে বিদ্যুতের উপকারভোগী এক ছাত্রীর বক্তব্য শোনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যা কিছু করছি সব তোমাদের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।
এখন করোনাকাল চলছে। তোমরা স্কুল করতে পারছে না। তারপরও বই আছে। তোমরা ভালো করে পড়াশোনা করো। পরীক্ষা তো হবে না, হয়তো প্রমোশন দিতে হবে। আমরা দেখছি কী করা যায়। এদিকে জানা গেছে, চলতি বছর পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (ইইসি) পরীক্ষা নেয়া হবে না। ক্লাস মূল্যায়নের মাধ্যমে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হবে। এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বছর সমাপনী-ইবতেদায়ি পরীক্ষা বাতিল করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হলে তিনি তাতে সম্মতি দেন। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এ বছর অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষাগুলো (জেএসসি-জেডিসি) নেয়া হবে কি হবে না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
একই সঙ্গে, সিদ্ধান্ত হয়নি এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়েও। বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনার কারণে ছেলেমেয়েরা আজ স্কুলে যেতে পারছে না। এর ফলে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারছে না। (এখন) অনলাইনে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে টেলিভিশনে। তোমারা সেখানে মনোযোগ দেবে। করোনাকালে প্রচুর সময় পাচ্ছ। তোমাদের পড়ার সুযোগ হয়েছে। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, সারাবিশ্বেই এ অবস্থা। এ সময় বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তার মন্ত্রণালয়ের কার্যালয় থেকে অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হন।
মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ২৭টি জেলার জনপ্রতিনিধিরাও ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী উপকারভোগী নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, পটুয়াখালী, কুমিল্লা ও মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং তাদের বক্তব্য শোনেন। এর মধ্যে স্কুলছাত্রী, কৃষক, শিক্ষক, গৃহিণী ও মসজিদের ইমামও বক্তব্য রাখেন। তারা বিদ্যুতের সুবিধা ও উন্নয়নের কথা বিস্তারিত তুলে ধরেন।