থামানো যাচ্ছে না স্বর্ণ চোরাচালান

55

নানা উদ্যোগ ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাতেও থামানো যাচ্ছে না স্বর্ণ চোরাচালান। প্রায় প্রতিদিনই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়ছে অবৈধ বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ। কোটি কোটি টাকার চালান আটকের পরেও পাচারকারীরা ওই বিপুল পরিমাণ অর্থের ক্ষতির তোয়াক্কা করছে না। তাছাড়া স্বর্ণের বড় বড় চালান জব্দ হলেও চোরাচালানী চক্রের নেপথ্যের প্রভাবশালীরা বরাবরই ধরা ছোঁয়ার আড়ালেই রয়ে গেছে। গ্রেফতারও হচ্ছে সোনা বহনকারীরা। আর মামলা হলেও তার তদন্ত থেমে যাচ্ছে মাঝপথে। কিছু বহনকারী ধরা পড়লেও জামিনে বের হয়ে আবারো স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত হচ্ছে। ফলে বিমানবন্দর কেন্দ্রিক চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিনিয়ত স্বর্ণের চালান জব্দ করা হচ্ছে। কোন কোন চালানে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার স্বর্ণও জব্দ করেছে কাস্টমস এবং শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। তারপরেও স্বর্ণের চালান আসছেই। মূলত স্বর্ণ চোরাচালানে সাধারণ কিছু বহনকারী ধরা পড়লেও জামিনে বের হয়ে আবারও স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত হচ্ছে। আর মামলার দীর্ঘ সময় ক্ষেপণ, স্বাক্ষীর অভাব, তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্বলতাসহ নানা কারণে অপরাধীদের শাস্তি হচ্ছে না। গত কয়েক বছর ধরেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিভিন্ন সময় বিমানের টয়লেটে স্বর্ণ, বিমানের সিটের নীচে স্বর্ণের প্যাকেট, যাত্রীর জুতার ভেতরে স্বর্ণ, লাগেজে স্বর্ণ আবার কখনো বা যাত্রীর পেটের ভেতরে ও পাযু পথেও পাওয়া যায় স্বর্ণ।সূত্র জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরে ১২৫টি সোনার চালান আটকের ঘটনায় থানা ও বিভাগীয়সহ ৭০টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে রহস্যজনক কারণে অর্ধশতাধিক মামলার তদন্ত থেমে গেছে। ফলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতায় মাঝেও বন্ধ হচ্ছে না চোরাচালান। এ চক্রের সাথে শুধু বাংলাদেশ বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী, ,কাস্টমসের কিছু অসাধূ কর্মকর্তা, কয়েকটি প্রাইভেট এয়ারলাইন্সের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিমানবন্দরের কর্মরত বিভিন্ন পেশার অসাধু কর্তা ব্যক্তিরা জড়িত। আর চক্রের শক্তিশালী নেটওয়ার্কেও কারণেই বন্ধ হচ্ছে না স্বর্ণ চোরাচালান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় অসাধু সদস্য এবং সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা শাখার কয়েকজন কর্মকর্তাও এর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন পর পরই আটক হচ্ছে বড় সোনার চালান। আর আটক না হওয়ার চালানের সংখ্যা যে কি পরিমাণ তা থেকে যাচ্ছে অজানা। অথচ গত ৩ বছরে দেশের ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুল্ক বিভাগ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোট ৩ হাজার কেজি চোরাচালানকৃত স্বর্ণ জব্দ করেছে। গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী ২০১২ সাল থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঘন ঘন সোনার চোরাচালান শুরু হয়। তখন ১৩ কেজি স্বর্ণ আটক করা হয়। ওই সময়ে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে স্বর্ণ ঢুকবে এরকম তথ্য ছিল বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের কাছে। সেই সময় থেকে কিছুদিন পর পরই অভিযান চালিয়ে স্বর্ণগুলো ধরা পড়তে থাকে।
সূত্র আরো জানায়, মূলত ভৌগোলিক অবস্থান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে আন্তর্জাতিক সোনা চোরাচালানকারীরা বাংলাদেশকে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আকাশ ও স্থলপথে সোনা চোরাচালান হয়ে আসছে বাংলাদেশে। আন্তর্জাতিক মাফিয়াচক্র বাংলাদেশকে চোরাচালানের নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। এখন মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও সোনা আসছে ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকে। আকাশপথে সোনার চালান এনে তা সহজেই আবার স্থলপথে পাচার হচ্ছে পাশের দেশ ভারতে। এ পর্যন্ত যত সোনা আটক হয়েছে, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি সোনা পাচার হয়েছে নিরাপদে। নিত্যনতুন কৌশল, রুট পরিবর্তন এনে সোনা চোরাচালান হচ্ছে। বিপুল অঙ্কের লাভের কারণে চোরাকারবারীরা সোনা চোরাচালানে যুক্ত হচ্ছে।
এদিকে সোনা চোরাচালানির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতঃপূর্বে বিমানের উপ-মহাব্যবস্থাপকসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তখন জানা যায়, চোরাচালানের এই চক্রে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও বিদেশীরা জড়িত। শুল্ক গোয়েন্দারা চোরাচালানের ঘটনাগুলো তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পেরেছে, বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী সোনা চোরাচালানের সাথে জড়িত রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ৩৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে।