থমকে গেছে লাহারপুরের তাঁত শিল্প

49

আজিম আলী

করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যাহত হচ্ছে সাধারণ জীবনযাত্রা। থমকে গেছে জীবিকা নির্বাহের হাতিয়ার। এমনি থমকে যাওয়া সময় পার করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারঘরিয়া ইউনিয়নের তাঁত শিল্পীরা। বাপ-দাদাদের ব্যবসা, তাঁত। সেই তাঁতের কাজ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন সেখানকার মানুষ। কিন্তু এই করোনার মধ্যে তাদের কোনো কাজ নেই। যার কারণে, বসবাস করা তাঁতীরা আজ অসহায় হয়ে পড়েছেন। করোনাকালে সরকারি কোন সহায়তাও জুটেনি তাদের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারোঘরিয় ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের লাহারপুর গ্রামে এক সময় তাঁতের কাজের সুনাম ছিল অনেক। লাহারপুর গ্রামের তাঁতীদের বাড়ি গেলেই তাঁত বুনার শব্দ আর চরকি ঘুরা দেখা যেত। তবে তাঁত বুনিয়ে তেমন আয় না হওয়ায় অনেকে এই কাজ ছেড়ে যুক্ত হয়েছেন অন্য পেশায়। তবে যা ছিল তাও আজ হুমকির মধ্যে। তাদের তৈরি করা রেশমের পোশাক গুলো রাজশাহী বা ঢাকায় বাজারজাত করা হতো। বর্তমানে করোনার কারণে সেটিও বন্ধ হয়েগেছে।
এই মহামারীতে লাহারপুরের তাঁত ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা দেয়া হলে এই করোনাকালে তাদের ব্যবসা সেইসাথে সংসারের কিছুটা সুবিধা হতো। তাঁতের কাজ করেন এমনি একজন বাবলু দাসের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ৪০ বছর থেকে তাঁতের কাজ করছি। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে সবকিছু যেন থমকে গেছে, আগের মত আর কাজের অর্ডার পায় না।
করোনায় আমাদের ব্যবসা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে একটাই। একটা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এই কারণে চার মাস থেকে কোনো কাপড় যায় না। এরফলে আমাদের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়াও আমরা সরকার থেকে কোন সুযোগ সুবিধা পাইনি।
সেখানকার আরো একজন তাঁতী শ্রী কানোলাল দাস বলেন, আমি ৩৫ বছর থেকে এই তাঁতের কাজ করছি। এখন ৪ মাস যাবৎ বসে আছি বেকার। এই করোনার কারণে সব কিছুই বন্ধ আমাদের। কোনো সুযোগ সুবিধা পাইনি কোনো সাহায্য পাইনি এখন পর্যন্ত। অনেক কষ্টে এখন চলছি। করোনাকালে সরকার থেকে কোনো সুযোগ সুবিধা পেলে উপকার হতো, চলাফেরা খাওয়া দাওয়াটা তো মোটামটি হতো কিছু না হলেও।
লাহারপুর গ্রামের শ্রী তপন কুমার দাস জানান, ব্যবসা অন্যান্য বছর ভাল গেলেও এবার তেমন যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, আমি তাঁতের কাজ করি প্রায় ৩০ বছর থেকে। অন্যান্য বছর ব্যবসা ভালোই হতো। কিন্তু এই করোনা এসে কোনো ব্যবসা নাই। সরকার থেকে যদি কোনো সুযোগ সুবিধা পাওয়া যেত তাহলে আমরা ব্যবসাটা চালিয়ে যেতে পারতাম। ব্যবসাটা করতে পারলে সংসারটাও ভালোমতো চলতো।
তাঁতিদের বিষয়টি ৪নং বারোঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল খায়েরকে জানানো হলে তিনি বলেন আগামীতে যখন সরকারি জিআর চাল আসবে তখন তাদেরকে সহযোগিতা দেয়া হবে। আবুল খায়ের বলেন, লাহারপুরে আমি ৭৩ বস্তা চাল দিয়েছি। এই জন্য তাঁতীপাড়াতে আমি যথেষ্ট দিয়েছি। ওখানে আমি ২১৯ জনকে সরকারি সুযোগ সুবিধা দিয়েছি। সামনে বরাদ্দ হলে ওরা আমার সাথে যোগাযোগ করবে। যারা পাইনি আমার সাথে যোগাযোগ করবে ওদের নামটা তালিকা করে সামনে জিআর এ তুলে দিবো।
এছাড়া তিনি আরও জানান ৪নং বারোঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে তাঁতীদের সংখ্যা ৮০ জন। এদের মতো আরও যারা অসহায় রয়েছে তাদেরকে আগামী জিআর থেকে সরকারি সহযোগিতা দিবেন বলে জানান ৪নং বারোঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।
আজিম আলী, ফেলো, রেডিও মহানন্দা ৯৮.৮ এফএম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ