শ্রীলঙ্কায় তেল কিনতে গিয়ে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার তেল কেনার জন্য দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর প্রতিটি পাম্পের সামনেই মানুষের দীর্ঘলাইন এখন নিত্যঘটনা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও মিলছে না কাক্সিক্ষত জ¦ালানি তেল। ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট চলায় দেশটিতে দেখা দিয়েছে জ¦ালানি তেলের তীব্র ঘাটতি, যা বিপাকে ফেলেছে স্থানীয়দের।
কোনো পণ্যই ঠিকমতো মিলছে না জানিয়ে তাদের অভিযোগ, দেশ পরিচালনায় শ্রীলঙ্কা সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। এর মধ্যেই তেল কিনতে গিয়ে দুই ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যু হলো। পুলিশ জানিয়েছে, মারা যাওয়া ওই দুই ব্যক্তিই সত্তরোর্ধ্ব ছিলেন। তারা পেট্রোল ও কেরোসিন কেনার জন্য দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আলাদা দুটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় সম্প্রতি নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে কেরোসিনের ব্যবহার বেড়েছে। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘লাফস’ গ্যাসের সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ রুপিতে। তেল, গ্যাস ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে শ্রীলঙ্কায়। গুঁড়া দুধের ৪০০ গ্রামের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ২৫০ রুপিরও বেশিতে।
ফলে দেশটিতে এক কাপ চায়ের দামও গিয়ে ঠেকেছে ১০০ রুপিতে। ঋণ শোধ করতে গিয়ে তলানিতে ঠেকেছে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। রিজার্ভ না থাকায় জ¦ালানি তেল, গুঁড়া দুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছে না শ্রীলঙ্কা সরকার। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, পরীক্ষার্থীদের হাতে কাগজ দিতে না পারায় পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে দেশটির শিক্ষা বিভাগ।
সাধারণ মানুষ মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে সরকারের ভুল অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের মাশুল দিতে হচ্ছে তাদের। প্রায় প্রতিদিনই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে দেশটির বিরোধী দলগুলো। গত মঙ্গলবারও বিক্ষোভকারীরা ঘেরাও করেন রাজধানী কলম্বোতে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের কার্যালয়। এ সময় প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করেন তারা। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকে দায়ী করছেন শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা।