Last Updated on ডিসেম্বর ১, ২০২৪ by
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন
জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে ডেঙ্গু সংক্রমণ এখন আর শীত-গ্রীষ্ম মানছে না, ফলে সবসময়ই ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে কয়েক বছর ধরে সারা বছরই কম-বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। একইসঙ্গে মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ না থাকার ফলে দেশে বছরব্যাপী ডেঙ্গু সংক্রমণ চলছে।
রবিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) আয়োজিত ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ও প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে গণসচেতনতামূলক আলোচনা সভায় এসব কথা জানান আলোচকরা।
বিপিএমসি’র সভাপতি এমএ মুবিন খানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. জাফরউল্লাহ চৌধুরী।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বিএমডিসির সহসভাপতি ডা. মো. জাফরউল্লাহ চৌধুরী জানান, ডেঙ্গু জ্বরের নির্ণয় সাধারণত রোগীর ক্লিনিক্যাল লক্ষণ এবং ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থাকা অঞ্চলে এক্সপোজারের ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে করা হয়। পাশাপাশি রক্তে ডেঙ্গু ভাইরাসের অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডি শনাক্তকরণের মতো ল্যাবরেটরি পরীক্ষাগুলোও রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়। তিনি জানান, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বেশ গুরুতর আকার ধারণ করেছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য অনুসারে, নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত ডেঙ্গুর কারণে ৪৬৫ জন মারা গেছে এবং বছরের শুরু থেকে ৯০ হাজার ৭৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর প্রতিকার হিসেবে তিনি মশার সংখ্যা কমানোসহ মশার সংস্পর্শ হ্রাস করাকে জোর দেন। এজন্য তিনি প্রজনন স্থান নির্মূল, মশা নিরোধক এবং জাল ব্যবহারের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা এবং সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে এম এ মুবিন খান বলেন, দেশে চলতি বছরের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৯০ হাজার ৭৯৪ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৮৫ জন। এই অবস্থায় ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য ও প্রতিরোধ করতে কী কী করণীয়, সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। একইসঙ্গে বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাহক মশা নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিপিএমসিএ সভাপতি বলেন, পৃথিবীতে যেসব শহর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে, দেখা যায় তারা সারাবছর ধরে নিবিড় নজরদারি চালায়, যেন কোথাও পানি জমে না থাকে। বিশেষ করে পাশের কলকাতা শহর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। সেখানে বেশ কয়েক বছর ধরে কলকাতা করপোরেশন সারা বছর ধরেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে। তিনি বলেন, তাদের প্রতিটি ওয়ার্ডে কর্মী আছেন, যাদের মধ্যে একদল প্রচারের কাজ চালায়, আর অন্য দল কোথাও পানি জমে কিনা সেটার ওপর নজর রাখে। এছাড়াও শহরের প্রতিটা হাসপাতাল বা পরীক্ষাগারে রোগীদের কী কী রক্ত পরীক্ষা হচ্ছে বা ভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে, তার প্রতিদিনের হিসাব রাখা হয়। ডেঙ্গু রোগীর খোঁজ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া যায়।’ তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন সবসময় সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে। প্রতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ যখন বেড়ে যায়, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করতে সচেষ্ট থাকেন।