জেলা শহরগুলোর সৌন্দর্য বর্ধন ও নাগরিক সুবিধা বাড়ানো উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সে লক্ষ্যে বিভিন্ন জেলা শহরে নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। অবশ্য সেজন্য একক কোনো প্রকল্প নেয়া না হলেও বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় কার্যক্রম চলছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার কিশোরগঞ্জে মৃতপ্রায় নরসুন্দা নদীকে পুনরুজ্জীবিত করতে ২০১২ সালে নরসুন্দা নদী ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভা সংলগ্ন এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। তখন ওই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের অধীনে লেক পার্ক গড়ে তুলতে হোসেনপুরের কাওনা থেকে সদর উপজেলার নীলগঞ্জ পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার নদী খনন, নদীর দুই কূলে তিন কিলোমিটার করে মোট ৬ কিলোমিটার ফুটপাত, ২০ কিলোমিটার রাস্তা, একটি বিনোদন পার্ক, ৮টি ঘাট ও ৬টি সেতু নির্মাণ এবং বিদ্যমান কয়েকটি সেতু সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। পরবর্তীতে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। একই সাথে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১১০ কোটি টাকা। একইভাবে মাদারীপুরে চলছে শকুনি লেকের উন্নয়ন কাজ। লেকটির উন্নয়ন কাজে ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সেই সাথে চলছে পৌর পার্কের নির্মাণকাজও। মাদারীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে ২০ একর ভূমি নিয়ে মাদারীপুর শুকুনি লেকের অবস্থান। ১৯৪৩ সালে মাদারীপুর রক্ষা করতে আড়িয়াল খাঁর ভাঙনের মুখ থেকে লেকটি কেটে মাদারীপুর শহর তৃতীয়বারের মতো গড়ে তোলা হয়।
সূত্র জানায়, পাবনার সুজানগর পৌর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বান্নাই খাল একসময় ¯্রােতস্বিনী নদীর মতো প্রবহমান ও গভীর ছিল। বিশেষ করে ওই সময় পদ্মা নদীর সাথে বান্নাই খালের সংযোগ থাকায় এলাকাবাসী খালটিকে ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি সেচ, মৎস্য আহরণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতো। এমনকি সত্তরের দশকেও বান্নাই খাল দিয়ে বড় বড় নৌকার পাশাপাশি পানসি নৌকা চলত। ওই সময় এলাকাবাসী ওসব নৌকায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে ব্যবসা-বাণিজ্য করত। পাশাপাশি খালের আশপাশের কৃষকরা খাল থেকে পানি নিয়ে কৃষি কার্যক্রম পরিচালনা করতো। কিন্তু সত্তরের দশকের শেষের দিকে বালি ও পলি জমে খালটির সাথে পদ্মা নদীর সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি বান্নাই খাল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে লেক পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওই লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমও গ্রহণ করা হয়। ওসব কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে খাল খনন, সিসি ব্লক স্থাপন, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ এবং পৌরবাসীর গোসলের সুবিধার্থে নির্মাণ করা হয়েছে ৯টি ঘাট। তাছাড়া নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে গোপালগঞ্জের মধুমতি নদীর লেক পার্কেরও। ওই এলাকার মানুষের চিত্তবিনোদনের আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে গোপালগঞ্জের মধুমতি লেক। লেকের দুই পাড়ে বসার জন্য রয়েছে সুন্দর ব্যবস্থা। রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা। ৮ কিলোমিটার লেকের চারপাশে রয়েছে পাকা রাস্তা। তাছাড়া লেকে আসা দর্শনার্থীদের থাকা-খাওয়ার জন্য রয়েছে আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। শিশুদের জন্য লেকপাড়ে রয়েছে খেলাধুলার ব্যবস্থা। প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত লেকের দুই পাড়ে সিরামিক ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ফুটপাত। লেকের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ৮টি সেতু। তার মধ্যে হরিদাশপুরে একটি, গেটপাড়ায় একটি, বিসিক শিল্প নগরী এলাকায় একটি, বাজার এলাকায় একটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সামনে একটি, পাচুড়িয়া এলাকায় একটি, মার্কাস মসজিদ এলাকায় একটি ও পুরনো মানিকদহ এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ করা হয়।
এদিকে জেলা শহরগুলোয় লেক পার্ক নির্মাণ বিষয়ে এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল বাশার জানান, জেলা শহরের মানুষ সব দিক থেকেই পিছিয়ে রয়েছে। যদিও অর্থনীতিতে তাদের অবদান কম নয়। অধিকাংশ জেলা শহরই পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি। নেই কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা। শিশুদের খেলার উপযোগী জায়গাও তেমন দেখা যায় না। সরকার যেখানে প্রয়োজন মনে করছে বা যেখানে সুযোগ রয়েছে সেখানেই লেক পার্ক তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে। সেজন্য একক কোনো প্রকল্প নেয়া না হলেও বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় কার্যক্রম চলছে।