‘জেন্ডার সমতাই শক্তি : নারী কন্যাশিশুর মুক্ত উচ্চারণে হোক পৃথিবীর অবারিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন’- এই প্রতিপাদ্যে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে অ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তাদের আলোচনায় মা ও শিশুর জন্ম, মৃত্যু, প্রজনন স্বাস্থ্য, জনসংখ্য বৃদ্ধি রোধে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রম, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভূমিকা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ২১০০ সালের ব-দ্বীপ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয় উঠে আসে।
সভায় এ সংক্রান্ত লিফলেট বিতরণ করা হয়। ওই লিফলেটের মাধ্যমে জানানো হয়, ১৯৭৪ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২.৬১ শতাংশ, যা হ্রাস পেয়ে ২০২২ সালে এসে দাঁড়ায় ১.৩১ শতাংশ। এই তথ্য ২০২১ সালের জনশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে নেয়া হয়েছে। ১৯৭৫ সালে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার ছিল ৭.৭ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ৬৩.৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মোট প্রজনন হার বা নারী প্রতি গড় সন্তান জন্মদানের হার ১৯৭৫ সালের ৬.৩ থেকে ২০২২ সালে ২.১৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
১৯৯১ সালে প্রত্যাশিত গড় আয়ু ছিল ৫৬.১, যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে ৭২.৪ (পুরুষ-৭০.৮, মহিলা-৭৪.২) শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪৯.৭ শতাংশ নারী ও কন্যাশিশু। তারপরও জনমিতিক আলোচনায় নারী ও কিশোরী তাদের জীবনের পছন্দ ও উপযুক্ত পেশা নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলার সুযোগ খুব কমই পায়। এছাড়া জনসংখ্যা নীতিতেও নারী ও কিশোরীর অধিকার সমভাবে উচ্চারিত হয় না। যার ফলে বিশ্বব্যাপী ব্যক্তি বিশেষের, বিশেষ করে নারীদের সক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি সীমিত হয়ে পড়ে। অথচ সমগ্র সমাজ ব্যবস্থার সুখী-সমৃদ্ধ টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে হলে নারী ও কিশোরীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে সবার আগে।
লিফলেটে আরো বলা হয়, সামগ্রিক উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার মূলে রয়েছে জেন্ডার অসমতা। এই ব্যাপক বৈষম্য নারী ও কিশোরীকে শিক্ষা, পেশা নির্বাচন এমনকি নেতৃত্বের জায়গায় অধিষ্ঠিত হতে বাধা প্রদান করে। ৮০০ কোটি মানুষের বিশ্বে সকলের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ নিতে নারী-পুরুষের সমতা বা জেন্ডার সমতার উন্নয় ঘটানো একান্ত প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন কিশোরীসহ সুবিধাবঞ্চিত অন্যান্য শ্রেণির মতামতকে গুরুত্ব দেয়া। তাদের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা জরুরি। তা না হলে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ বাধাগ্রস্ত হবে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন। জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেনÑ জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. জুবায়ের জাহাঙ্গীর, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ডা. রাকিবুল ইসলাম, শিবগঞ্জ উপজেলার মেডিকেল অফিসার ডা. আবু সাঈদ মুহাম্মদ মাসুদসহ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা ও মাঠকর্মীগণ।
পরে সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা ও মাঠকর্মীদের ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।