||কপোত নবী||
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের অদূরে মহানন্দা নদীর উপর নির্মিত বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু (মহানন্দা সেতু)। এ সেতুর ফলে জনগণ অনেক উপকৃত হয়েছে। বিশেষ করে ওপারের মানুষদের শহর তথা রাজধানী যেতে হলে এ সেতুর উপর দিয়েই যেতে হয়। তাছাড়া চিকিৎসা নিতে আসা মানুষজন দ্রুততম সময়ের মধ্যে শহরে আসতে পারছে। এ সেতুটির ফলে বহু মানুষ নানা দিক থেকে প্রতিনিয়ত উপকৃত হচ্ছে। এসেতুকে ঘিরে উপকৃত নারী হচ্ছেন শ্রী আমতি রানী নামে এক নারী। ওই নারী মহানন্দা সেতু চালুর পর থেকেই বারঘরিয়া অংশে সেতুর সিঁড়ির কাছে বসে বাদাম বিক্রি করে আসছেন। তার বহু আগে থেকে আমতি রানীর স্বামীও বাদাম বিক্রি করতেন। তাদের বাড়ি বারঘরিয়ার নতুন বাজার, পুল পাড়ায়। গত ১১ মাস আগে রোগে আক্রান্ত হয়ে তার স্বামী মারা যান। স্বামী মারা গেলেও আমতি রানী ভেঙ্গে পড়েন নি।
স্বামীর পথেই হেঁটেছেন তিনি। বাদাম বিক্রির মধ্যদিয়ে পার করেছেন জীবনের ৩০টি বছর। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসেও তিনি বাদাম বিক্রি করে যাচ্ছেন। এই বয়সে বাদাম বিক্রি করেও চোখে মুখে এতোটুকু ক্লান্তির ছাপ নেই। বাদাম বিক্রি করার জন্য তাকে বাদাম বাদাম বলে চিৎকার করতে হয় না। ভালো বাদাম বিক্রি করেন তাই ক্রেতারা তাকে দেখলেই বাদাম কেনেন। প্রতিদিন একই জায়গায় বসে তিনি বাদাম বিক্রি করেন। বাদাম বিক্রি করেই খুব সুখে আছেন বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, একা থাকি আমি, কারো কাছে হাত পাততে হয় না। ছেলে মেয়েরা যে যার মত ভালই আছে। আমি আর আমার স্বামী জীবনে বহু কষ্ট করে ওদের মানুষ করেছি। সবার বিয়েও দিয়েছি। একটু কৌতুহল নিয়ে খোঁজ নিলাম তার পরিবারের। আমতি রানীর সাথে কথা বলে যতটুকু জানতে পারলাম তা হলো, আমতি রানীর ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে সন্তান রয়েছে। এতগুলো সন্তানকে তারা দু’জনে মানুষ করেছেন এই বাদাম বিক্রি করেই। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেও বিয়ে করে সংসার করছে। স্বামী মারা যাবার পর ছেলে চেয়েছিল নিজের কাছে রাখতে কিন্তু আমতি রানী জাননি, তিনি বাদাম বিক্রি করেই একা জীবন যাপন করছেন।
শহর তথা দূর-দূরান্ত থেকে যারা বিনোদনের জন্য মহানন্দা সেতু ঘুরতে আসেন সেতুর উত্তরদিকে বারঘরিয়া অংশে আমতি রানীকে বাদাম বিক্রি করতে দেখতে পাবেন। এমন কোন দিন নেই যে তিনি বসেন না। আর শহরের মানুষ যারা প্রতিনিয়ত ঘুরতে যান তারা আমতি রানীকে খুব ভালোভাবেই চেনেন। আমতি রানী হচ্ছে অবহেলিত ও অসহায় নারীদের আইডল। কারণ, তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন মনের জোর থাকলে কাজ করে অর্থ উপার্জন করা যায়। ভিক্ষার ঝুলি তিনি কাঁধে না নিয়ে কাজ করে জীবন যাপন করছেন। আমতি রানীকে দেখে অন্য অবহেলিত ও অসহায় নারীরা শিক্ষা নিবে এটাই প্রত্যাশা।