জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ১২১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত

22

যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২১তম জন্মবার্ষিকী সোমবার (২৫ মে) উদযাপিত হয়েছে।
জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবছর ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সীমিত পর্যায়ে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচির মধ্যে ছিল সকালে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং ফাতেহা পাঠ ও দোয়া। বিশ্ব¦বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। তিনি কবির বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও দোয়া করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী উপস্থিত ছিলেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান কবির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনা, সম্প্রীতি, সাম্য ও মানবতার কবি। তিনি সবসময় অন্যায়-অত্যাচার ও অসাম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদী ছিলেন।
তার লেখা গান, কবিতা, গল্প ও উপন্যাস আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সকলকে উদ্বুদ্ধ করেছে বলে উল্লেখ করে উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, কবির অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধে সকলে উজ্জীবিত হয়ে ধৈর্য ও সাহসিকতার সাথে করোনা ভাইরাস উদ্ভূত দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।
এ উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্মিত ‘জাগো অমৃত পিয়াসী’ শীর্ষক আনুমানিক ৫০ মিনিটের একটি বিশেষ অনুষ্ঠান সোমবার বিটিভিসহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে একযোগে সম্প্রচারিত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে নজরুলের ওপর নির্মিত অনুষ্ঠান প্রচার করছে এবং করবে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।
বাংলা কবিতায় নজরুলের আবির্ভাব একেবারেই উল্কার মতো। হঠাৎ করে একদিন তিনি বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হয়ে সমস্ত আকাশকে কিভাবে রাঙিয়ে গেলেন অথবা উজ্জ্বল করে দিলেন তা নিয়ে এখনো গবেষণা হতে পারে।
নজরুল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, নজরুল ইতিহাস ও সময় সচেতন মানুষ ছিলেন। যার প্রভাব তার লেখায় স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, তুরস্কে কামাল পাশার নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আর ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের তরঙ্গকে নজরুল তার সাহিত্যে বিপুলভাবে ধারণ করেছেন।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা।
তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সংগীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তার কবিতা, গান ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক।
তার লেখনী জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনার এক বছর পর ১২ ভাদ্র ১৯৭৬ সালের শোকের মাসেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নজরুল।
কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।