চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলাপর্যায়ে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। রবিবার বেলা সোয়া ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন এই মতবিনিময়ের আয়োজন করে।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন রাবারড্যাম, কানসাট ম্যাংগো মিউজিয়ামসহ জেলার সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন।
মতবিনিময় সভায় নিজেকে একজন সোলজার উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বৈষম্য পছন্দ করতেন না। তাঁর মূল দর্শনই ছিল- কারো প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। তিনি প্রান্তিক মানুষকে ভালোবাসতেন।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রান্তিক মানুষকে ভালোবাসেন, যে কোনো অনুষ্ঠানে বিখ্যাত কারো কথা শোনার চেয়ে সবচেয়ে বেশি প্রান্তিক মানুষের কথা শোনেন এবং তাদের কথা মূল্যায়ন করেন। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৪টি বিষয় উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে শিক্ষা হচ্ছে অন্যতম। আমাদের নতুন প্রজন্মকে সেভাবেই গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে আমাদের যুবসমাজকে কাজে লাগাতে হবে।
ড. কবীর সরকারি কর্মকর্তাদের বলেন- আপনারা যেসব প্রকল্প প্রস্তাব করবেন সেসব বুঝেশুনে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে করবেন। তা না হলে প্রকল্পগুলো পাস হবে না। কেননা সরকার বাড়তি কোনো কিছু করবে না। তিনি বলেন- যেসব উন্নয়ন কাজ এখনো চলমান রয়েছে তা সঠিকভাবে করবেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যেই মনিটরিংয়ে আসবেন। কাজেই এই জেলার যেন বদনাম না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো ঠিকমত পালন করবেন।
আচরণ পরিবর্তন করতে হবে উল্লেখ করে ড. হুমায়ূন কবীর বলেন- অনেক সময় দেখা যায় যারা ক্ষমতাবান, ধনবান, বলবান, এককথায় যাদের টাকা আছে তাদের সেবা পেতে অসুবিধা হয় না, তখন কোনো সমস্যা হয় না, সব সমস্যা গরিব মানুষের ক্ষেত্রে। যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একেবারেই পছন্দ করেন না। কাজেই প্রান্তিক মানুষকে অবহেলা না করে সঠিক সময়ে সঠিক সেবাটা দেবেন।
মাদক প্রসঙ্গে তিনি বলেন- মাদককে না বলতে হবে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো ধরনের গুজবে কান দেয়া এবং না জেনে-বুঝে লাইক শেয়ার থেকে বিরত থাকতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কথা বলেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার। তিনি বলেনÑ ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এখন ৫০০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়। এটা আরো বাড়াতে পারলে গার্মেন্টসকেও ছাড়িয়ে যাবে। এজন্য আমাদের যুবসমাজকে কাজে লাগাতে হবে। তাদেরকে শুধু গাইডলাইনটা দিতে হবে। এটাকে সরকার খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে পুলিশ সুপার মো. ছাইদুল হাসান জানান, বর্তমানে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং সড়ক দুর্ঘটনা রোধের চেষ্টা চলছে।
নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শংকর কুমার কুন্ডু তার বক্তব্যে বলেনÑ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের কথা মুক্তিযুদ্ধের কথা প্রচার করা হয়।
সভায় ৫৩ বিজিবির চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. নাহিদ হোসেন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফাজ উদ্দিন, সিভিল সার্জন এস এম মাহমুদুর রশিদ, জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর রশিদ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাহার আলী প্রমানিক, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম ইফতেখার মজিদ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল আহসান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরিন ঝিনুক, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার সরকার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আনিছুর রহমান খান, জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে কুলসুম, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাহিদা আখতার, জেলা প্রাণিসম্পদক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার ছানোয়ার হোসেনসহ অন্য সরকারি দপ্তরের প্রধানগণ নিজ নিজ দপ্তরের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- স্থানীয় সরকার চাঁপাইনবাবগঞ্জর উপপরিচালক সরকারের উপসচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আনিছুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) পাপিয়া সুলতানাসহ অন্য কর্মকর্তাগণ।
এর আগে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর কালেক্টরেট ইংলিশ স্কুল ও কালেক্টরেট শিশুপার্ক পরিদর্শন করেন।