ভারতের হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দলিত ছাত্রের আত্মহত্যার জেরে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। একই সঙ্গে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ।গত রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে এক সহপাঠীর কক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা ওই ছাত্রের নাম রোহিত ভেমুলা।দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল গতকাল মঙ্গলবার এ ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা নয়, খুন’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি একে গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সাম্যকে হত্যা বলেও মন্তব্য করেন। এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী ব-ারু দত্তাত্রেয়কে বরখাস্ত করে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান কেজরিওয়াল।
রোহিতের আত্মহত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী গতকাল হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের দাবি সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন। তিনি যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন।
এ ঘটনায় সোমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ব-ারু, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রামচন্দ্র রাও এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামালা দায়ের করেছে পুলিশ। ব-ারুর বিরুদ্ধে দলিত ছাত্রের আত্মহত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানির বাসভবনের বাইরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ হয়েছে মুম্বাই, পুনে ও কলকাতাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। গতকাল ব-ারু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অপসারণ দাবি করেছে ‘তেলেঙ্গানা জাগৃতি যুব মোর্চা’ নামের একটি সংগঠন। হায়দরাবাদে ব-ারুর বাড়ির বাইরে বিক্ষোভে করে তারা। তাদের অভিযোগ, ব-ারুর চাপেই পিএইডি গবেষক রোহিতের বিরুদ্ধে ‘অন্যায়’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রী অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের আগস্টে। মুম্বাই বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত ইয়াকুব মেমনের মৃত্যুদ- নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ দেখানোর সময় বিজেপির ছাত্রসংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের এক ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের আম্বেদকর ইউনিয়নের সদস্য রোহিতসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে। প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি রোহিতদের ক্লিন চিট দেয়। কিন্তু পরে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, ব-ারু চিঠি লিখে স্মৃতি ইরানিকে জানান, হায়দরাবাদ বিশ্বাবিদ্যালয় জাতিবাদের আখড়া হয়ে উঠেছে। চরমপন্থী এবং জাতীয়তাবাদবিরোধী হয়ে উঠেছে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ।
এরপর রোহিতসহ পাঁচ ছাত্রকে ক্লাসরুম ও গবেষণাগার ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অন্য কোনো জায়গায় যেতে নিষেধ করা হয়। বের করে দেওয়া হয় হোস্টেল থেকেও। এর পর থেকে বিশ্ববিদ্যলয় ক্যাম্পাসের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে থাকছিলেন রোহিতরা। সেই তাঁবুও ভেঙে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সুইসাইড নোটে কারো বিরুদ্ধে আঙুল না তুললেও রোহিতের এই অস্বাভাবিক মৃত্যু বিজেপিকে বিপাকে ফেলেছে। সূত্র : বিবিসি, এনডিটিভি।