সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৯ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

Last Updated on মে ২০, ২০২৪ by

ছক্কার রেকর্ড গড়লেন আভিষেক

আভিষেক শার্মা ব্যাট হাতে ক্রিজে যাওয়া মানেই এখন ঝড়ো ব্যাটিং আর ছক্কার মেলা। পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ম্যাচেও তেমন তা-ব চালালেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের তরুণ ব্যাটসম্যান। এই ইনিংসের পথে দারুণ এক কীর্তিও গড়লেন তিনি। ছক্কার একটি রেকর্ডে ছাড়িয়ে গেলেন ভিরাট কোহলিকে। আইপিএলের এক আসরে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড এখন আভিষেকের। চলতি আইপিএলে ৪১টি ছক্কা হয়ে গেছে তার। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এক আসরে সবচেয়ে বেশি ছক্কার আগের রেকর্ড ছিল কোহলির। ২০১৬ আইপিএলে ১৬ ইনিংস খেলে তিনি ছক্কা মেরেছিলেন ৩৮টি। আভিষেক তাকে ছাড়িয়ে গেলেন তিন ইনিংস কম খেলেই। পাঞ্জাবের বিপক্ষে হায়দরাবাদে রোববার ২৮ বলে ৬৬ রানের ইনিংসের পথে ছয়টি ছক্কা মারেন আভিষেক। এ দিন তিনি ফিফটি করেন ২১ বলে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এই মৌসুমে ২৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের সবচেয়ে ধীরগতির ফিফটি এটি! এবারের আইপিএলে তিনি এতটাই বিধ্বংসী ব্যাটিং করছেন। এর আগে তার একটি ফিফটি ছিল ১৬ বলে, আরেকটি ১৯ বলে। আগের ম্যাচেই তিনি ছয় ছক্কায় অপরাজিত ৭৫ রান করেছেন ২৮ বল খেলে। সেই ২০১৮ সালে ১৭ বছর বয়সে তার আইপিএল অভিষেক দিল্লির হয়ে। প্রথম ম্যাচে ১৯ বলে ৪৬ রান করলেও আইপিএলে থিতু হতে তার সময় লেগে যায় অনেকটা। এতটা মারকুটে ব্যাটসম্যান তখন ছিলেন না। বরং ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বাঁহাতি স্পিন আর দারুণ ফিল্ডিং মিলিয়ে কার্যকর এক প্যাকেজ মনে করা হতো তাকে। আইপিএলে নিজের প্রথম চার মৌসুম মিলিয়ে ১৬টি ম্যাচ খেলতে পারেন। কোনো মৌসুমেই মোট রান একশ পেরোয়নি। অবশেষ ২০২২ আসরে নিজের জায়গা করে নিতে পারেন। হায়দরাবাদের হয়ে ১৪ ইনিংস খেলে সেবার ৪২৬ রান করেন। তবে এতটা আগ্রাসী তখন ছিলেন না, স্ট্রাইক রেট ছিল ১৩৩.১৩। গত মৌসুমে ১১ ম্যাচ খেলে করতে পারেন ২২৬ রান। সেই তিনি এবার ভিন্ন রূপে। শুধু ধারাবাহিকতায় নয়, ব্যাটিংয়ের ধরনেও। আগের সঙ্গে এই আভিষেককে মেলানেই কঠিন। ব্যাটিংয়ে প্রথম বল থেকেই আগ্রাসন ছাড়া অন্য কোনো পথ তার জানা নেই যেন। তার রিফ্লেক্স বেড়েছে, শটের পরিধি অনেক বেড়েছে, সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সাহস। একই ঘরানার আরেক ব্যাটসম্যান ট্রাভিস হেডের সঙ্গে মিলে গড়ে তুলেছেন অবিশ্বাস্যরকমের বিধ্বংসী এক উদ্বোধনী জুটি। পয়েন্ট তালিকায় দুইয়ে থেকে হায়দরাবাদের প্লে অফে যাওয়ায় এই জুটির আছে বড় অবদান। ব্যাটিংয়ের ধরনে বদলে যাওয়ার ইঙ্গিতটা অবশ্য আইপিএলের আগেই দিয়েছিলেন আভিষেক। ভারতের আরেক ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফির সবশেষ আসরে তিনি ১০ ইনিংসে দুই সেঞ্চুরি ও তিন ফিফটিতে ৪৮৫ রান করেন ১৯২.৪৬ স্ট্রাইক রেটে। সেই ব্যাটিংকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছেন তিনি আরও বড় মঞ্চে। চলতি আইপিএলে এখনও পর্যন্ত ৪৬৭ রান করেছেন ২০৯.৪১ স্ট্রাইক রেটে। এই আসরে ৩০০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার চেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেট আছে আর কেবল জেইক ফ্রেজার-ম্যাকগার্কের (২৩৪.০৪ স্ট্রাইক রেটে ৩৩০)। অসাধারণ এই পথচলায় এবার ছক্কার রেকর্ড করে ফেললেন কোহলিকে পেছনে ফেলে। ভারতীয়-বিদেশি মিলিয়ে ছক্কার রেকর্ডটি অনুমিতভাবেই ক্রিস গেইলের। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে ২০১২ আসরে ১৪ ইনিংসে ৫৯ ছক্কা মেরেছিলেন ‘ইউনিভার্স বস।’ কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ২০১৯ আসরে ৫২ ছক্কা মেরে রেকর্ডের দুইয়ে আন্দ্রে রাসেল। ২০১৩ আসরে আবার বেঙ্গালুরুর হয়ে ৫১ ছক্কা মেরে রেকর্ডের তিনেও আছেন গেইল। এক আসরে সবেচয়ে বেশি ছক্কায় শীর্ষ সাতের মধ্যে চারবার আছে গেইলের নাম। ২০১১ আসরে তিনি ছক্কা মেরেছেন ৪৪টি, ২০১৫ আসরে ৩৮টি। যথারীতি প্রতিবারই বেঙ্গালুরুর হয়ে। এছাড়া জস বাটলার ২০২২ আসরে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ছক্কা মেরেছেন ৪৫টি। আভিষেকের সামনে এবার ম্যাচ আছে অন্তত আরও দুটি। দল ফাইনালে উঠতে পারলে ম্যাচ বাড়বে আরও একটি। রেকর্ডটিকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ তাই থাকছে তার।

About The Author

শেয়ার করুন