বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

Last Updated on মে ৭, ২০২৫ by

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী সব আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবি

বনলতার পাশাপাশি ধূমকেতু, পদ্মা, সিল্কসিটি ও মধুমতিসহ ঢাকাগামী সব আন্তঃনগর ট্রেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চালুসহ ৮ দাবিতে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছে সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এই কর্মসূচির আয়োজন করে সুজনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখা। মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষরে সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
জেলা সুজনের সভাপতি আসলাম কবীরের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে প্রধান বক্তা ছিলেন সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মনোয়ার হেসেন জুয়েল।
কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য দেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ, সিনিয়র সহসভাপতি খায়রুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মাওলানা আব্দুল মতিন, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা মোখলেশুর রহমান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইসাহাক, শাহ নেয়ামতুল্লাহ কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান, ড্যাব সদস্য ডা. ইসমাইল হোসেন ও ডা. মাহফুজ রায়হান, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডাবলু কুমার ঘোষ, কলেজ শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার, প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সভাপতি আফসার আলী, জেলা কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আব্দুর রাহিম, মাহিন খাঁন ও সাব্বির আহম্মেদ, নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আবু হেনা বাবলু ও সংগঠক শওকত আলী, সমাজকর্মী আব্দুল মজিদ, সমাজকর্মী শাহনেওয়াজ খাঁন সিনা, জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান অনু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব বাবর আলী রুমন, শওকত আলী, সদর উপজেলা সুজনের সভাপতি অ্য্যাডভোকেট নুরে আলম সিদ্দিকী আসাদ, সুজনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর শাখার সভাপতি মো. জমশেদ আলী, নাচোল উপজেলা সুজনের সম্পাদক শাকিল রেজা, চা দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কামরুজ্জামান।
নানাভাবে অবহেলিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাবাসীর আট দফা প্রাণের দাবি পূরণে রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ প্রধান উপদেষ্টার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন বক্তারা। আগামী ৭ দিনের মধ্যে দৃশ্যমান দাবি আদায় না হলে আগামী ১৪ মে ভোর সাড়ে ৫টা হতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের জনগণকে সাথে নিয়ে রেল অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন জেলা সুজনের সম্পাদক মনোয়ার হোসেন জুয়েল।
মানববন্ধনে মনোয়ার হোসেন জুয়েল বলেন, দেশের রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত চলাচলের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাবাসীকে খুব ভোরে একমাত্র আন্তঃনগর ট্রেন বনলতার ওপর নির্ভর করতে হয়। অথচ অন্যান্য আন্তঃনগর ট্রেন রাজশাহী জেলা পর্যন্ত এসে অযথা কালক্ষেপণ করে সেখান থেকে ফিরে যায়। যা দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের সাথে বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ও তার দোসররা জোরপূর্বক এসকল আন্তঃনগর ট্রেন রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে আটকিয়ে রাখে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাধারণ মানুষকে তাদের প্রাপ্য নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এসেছে। তিনি বলেন, বিষয়টি শুধুমাত্র বৈষম্যই নয়, চরম অমানবিকও বটে। এই অঞ্চলের সর্বশেষ রেলওয়ে স্টেশন চাঁপাইনবাবগঞ্জ হওয়া সত্ত্বেও ধূমকেতু, পদ্মা, সিল্কসিটি ও মধুমতি আন্তঃনগর ট্রেনগুলো নানান অযৌক্তিক অজুহাতে রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। ফলে এই এলাকার মানুষ বিশেষ করে নারী, শিশু এবং মুমুর্ষ রোগী অত্যন্ত কষ্ট করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনে উঠতে বাধ্য হন। ফিরতি পথে একইভাবে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে নেমে পুনরায় বাসযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরসহ ভোলাহাট, শিবগঞ্জ, নাচোল, গোমস্তাপুর উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে যাতায়াত করেন। ফলশ্রুতিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন হতে সকল আন্তঃনগর ট্রেন চলাচলের জোর দাবি জানান তিনি।
অবহেলিত এই জনপদের মেহনতি মানুষের দাবিগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততার সাথে সমাধানের আকুল আবেদনও জানান মনোয়ার হোসেন জুয়েল।
দাবিগুলো হলো- ১. অনতিবিলম্বে বনলতার পাশাপাশি সকল আন্তঃনগর (ধূমকেতু, পদ্মা, সিল্কসিটি ও মধুমতি) ট্রেন রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের পরিবর্তে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে চালু; ২. নবনির্মিত ডাবল লাইন যমুনা নদী রেলসেতু থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত নতুন ডাবল রেললাইন স্থাপন, পুরাতন রেললাইন সংষ্কার ও সিগন্যাল ব্যবস্থা আধুনিকীকরণসহ যাত্রীসেবা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত; ৩. দ্রুততম যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্লাটফরম বর্ধিতকরণ, প্লাটফরমে সিঁড়ির ব্যবস্থা ও সীমানা নিরাপত্তা বেষ্টনী/প্রাচীর নির্মাণসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের পূর্ণাঙ্গ আধুনিকায়ন। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ, আমনুরা ও রহনপুরে বাংলাদেশ রেলওয়ের দখলকৃত জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা অনতিবিলম্বে উচ্ছেদ ও দখলমুক্ত করা; ৪. চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার ‘রহনপুর রেলওয়ে স্টেশন’কে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দর ঘোষণা; ৫. আমনুরা, নাচোল হয়ে রহনপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত সকল আন্তঃনগর ট্রেনের সময় অনুযায়ী কানেক্টিং অথবা কমিউটার ট্রেন চালু; ৬. আমনুরা বাইপাস রেলওয়ে স্টেশনে সকল আন্তঃনগর ট্রেনের ন্যূনতম ৫ মিনিটের যাত্রা বিরতি; ৭. আমনুরা রেলওয়ে জংশনকে আধুনিক রেলজংশনে পরিণত করা; ৮. রাজধানী ঢাকা থেকে নাটোর, রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত দুই ধারে প্রশস্ত সার্ভিস লেনসহ ৬ লেন আধুনিক মহাসড়ক নির্মাণের জোর দাবি জানান।
মনোয়ার হোসেন জুয়েল বলেন, এ দাবিগুলো বাস্তবায়নেরে মধ্য দিয়ে জেলার মানুষের আশার আলো যেমন প্রতিফলিত হবে, তেমনি রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ও হবে।
মানববন্ধনে জেলার সুশীল সমাজের মানুষ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন পেশাজীবী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ বিভিন্ন স্তরের সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
দেড় ঘণ্টার মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন জেলা সুজনের নেতৃবৃন্দ।

About The Author

শেয়ার করুন