আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট আমবাজার এখনো জমজমাট। দেখলে মনেই হবে না যে, আমের মৌসুম শেষ হয়েছে। বতর্মানে দুই পদ্ধতিতে চাষ করা আশ্বিনা আম প্রতিবছরের মতোই বাজার দখল করে আছে। অন্যদিকে বিদেশী জাতের আম কাটিমন ও নাবিজাতের আম গৌড়মতির দাম অনেক চড়া। আর এই দুটি আমের কারণে গতবারের চেয়ে এবার আশ্বিনা আমের দাম কিছুটা কম বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে কানসাট বাজারে দেখা যায়, রিকশাভ্যানে ডালিতে ভর্তি করে বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা কানসাট বাজারে আম নিয়ে এসেছেন। ভ্যানচালকরা আমের মূল বাজারে প্রবেশ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের একপাশ দিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে কেউ একটু এদিক-ওদিক হলেই সৃষ্টি হচ্ছে সাময়িক যানজট। এরপর তারা ঐতিহাসিক কুঁজে রাজার রাজবাড়ীর পেছনে আমের মূল বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছেন।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সদ্য জিআই সনদ পাওয়া আশ্বিনা আম প্রতি মণ আড়াই হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ফ্রুট ব্যাগিং করা আশি^না প্রতি মণ আড়াই হাজার টাকা এবং ফ্রুট ব্যাগিং ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত ঝিনুক আশ্বিনা সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে কাটিমন আম প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা এবং নাবিজাতের গৌড়মতি নামের আমটি বিক্রি হচ্ছে ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা মণ দরে।
আব্দুল আওয়াল নামের এক আড়তদার বলেন- বুধবার আমের দাম একটু বেশি ছিল। ব্যাগিং করা আশ্বিনা আম বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা এবং ব্যাগিং ছাড়া ৪ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে। এছাড়া কাটিমন ৯ হাজার টাকা এবং গৌড়মতি ১০ হাজার টাকা। গত বৃহস্পতিবার আশ্বিনা আমের আমদানি বেশি হওয়ায় দাম একটু কম। তার আড়ত থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১৫০ ক্যারোট আম ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।
গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া থেকে ঝিনুক আশ্বিনা আম নিয়ে আসা রাকিবুল ইসলাম বলেন- ৭০০ মণ আমের লক্ষ্য নিয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা মণ ধরে একটি বাগান কিনেছিলাম। বর্তমানে ৪ হাজার টাকা প্রতি মণ বিক্রি করছি। আশা করছি, ভালো আয় হবে।
একই এলাকার ব্যবসায়ী মানিরুল ইসলাম জানান, তিনি বাৎসরিক ১ লাখ ২০ হাজার টাকা হিসাবে সাড়ে ৫ বিঘা জমি ৭ বছরের জন্য লিজ নিয়ে আম চাষ করছেন। এবারই তার লিজের টাকা উঠে আসবে বলে তিনি জানান।
তবে ক্রেতা কম থাকায় অনেক আমচাষিকে রিকশাভ্যানে আম নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। অনেকেই বলেছেন, এইস ময়ে গৌড়মতি ও কাটিমন আমবাজারে পাবার কারণে আশ্বিনার দাম অনেকটাই কমেছে। বতর্মান সময়ে দাম আরো বেশি থাকার কথা ছিল বলে তারা জানান।
এদিকে কানসাট আমবাজারের ইজারাদার রফিকুল ইসলাম বাবু জানান, কানসাট আমবাজার থেকে বতর্মানে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার মণ আম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।