Last Updated on জানুয়ারি ৬, ২০২৫ by
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমবাগান : নাচোল ও গোমস্তাপুরে বেড়েছে কমেছে শিবগঞ্জ-ভোলাহাটে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান অর্থকরী ফসল হচ্ছে আম। আমকে ঘিরে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়ে থাকে। আমের বাণিজ্যিকীকরণের পর থকে এখন মোটামুটি সারাবছরই আম উৎপাদন করছেন কয়েকজন তরুণ উদ্যোক্তা। তবু এখনো সাধারণভাবেই আমের চাষাবাদ হচ্ছে।
আর অল্পদিনের মধ্যেই আম গাছগুলোয় মুকুল ফুটতে শুরু করবে। মুকুলের ম ম গন্ধে মুখরিত হবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এখন থেকেই অনেক আমচাষি আমগছের পরিচর্যা শুরু করেছেন। নিচ্ছেন আমবিজ্ঞানী ও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ। ঠিক কখন কোন সময় থেকে পরিচর্যা করলে আমের ভালো ফলন পাওয়া যাবে তা নিয়ে করছেন আলোচনা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায় আমবাগান বৃদ্ধি পেয়েছে। আর কমেছে শিবগঞ্জে ১০০ হেক্টর এবং ভোলাহাটে ২৯ হেক্টর। জেলায় গড় কমেছে ১০০ হেক্টর। তবে বাগানের সংখ্যা কমলেও বৃদ্ধি পেয়েছে আমগাছের সংখ্যা। কারণ হচ্ছে, হাইডেনসিটি বা প্রতি হেক্টরে আমগাছের ঘনত্ব বেশি।
এর কারণ হিসেবে জানা যায়, বারমাসি আম উৎপাদনের জন্য নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলার বরেন্দ্র খ্যাত মাটিই বেশি উপযোগী। অন্যদিকে ধানচাষে ভূগর্ভের পানির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া ধান বাদ দিয়ে অন্য ফসল চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া ধানচাষের চেয়ে আমচাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় শিক্ষিত তরুণরা বরেন্দ্র অঞ্চলে আমচাষে এগিয়ে আসছেন। এর ফলে বরেন্দ্র এলাকায় আমচাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে।
অন্যদিকে শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট উপজেলার শতবছর বা তারও আগের বিশাল বিশাল আমগাছে ভালো ফলন না হওয়ায় বাগানমালিকরা সেইসব গাছ কেটে অন্য ফসল চাষাবাদ করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলার ৫ উপজেলায় আমবাগান ছিল ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর। এবার ১০০ হেক্টর কমেছে। গতবছর সদর উপজেলায় আমবাগান ছিল ৫ হাজার ১৮০ হেক্টর। এবারো তাই আছে। অন্যদিকে শিবগঞ্জ উপজেলায় গতবছর ২০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমবাগান থাকলেও এবার ১০০ হেক্টর কমে রয়েছে ২০ হাজার ১০০ হেক্টর। গোমস্তাপুর উপজেলায় গত বছর ৪ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে আমবাগান থাকলেও এবার বৃদ্ধি পেয়ে ৪ হাজার ২৪০ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। নাচোল উপজেলায় আমবাগান বেড়েছে ১৯ হেক্টর। গতবছর ছিল ৪ হাজার ৩৩১ হেক্টর, এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৫০ হেক্টরে। ভোলাহাট উপজেলায় গতবছর আমবাগান ছিল ৩ হাজার ৬৬৩ হেক্টর। এবার কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৩৪ হেক্টর।
এদিকে সদর উপজেলায় গত বছর আমগাছ ছিল ৮ লাখ ৩৭ হাজার ৭০৫টি, এবার রয়েছে ১১ লাখ ৯ হাজার ৯টি। গত বছর শিবগঞ্জ উপজেলায় আমগাছ ছিল ২৩ লাখ ৩২ হাজার ৮২৫টি, এবার রয়েছে ২২ লাখ ৭৪ হাজার ২৫টি। গোমস্তাপুর উপজেলায় গতবছর আমগাছ ছিল ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬৫০টি, এবার রয়েছে ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬৫০টি। নাচোল উপজেলায় গতবছর আমগাছ ছিল ২৯ লাখ ৮ হাজার ৮৫০টি, এবার রয়েছে ৩০ লাখ ৪ হাজার ৩৩০টি এবং ভোলাহাট উপজেলায় গতবছর আমগাছ ছিল ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৭৯৫টি, এবার রয়েছে ৯ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্বগবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোখলেসুর রহমান বলেনÑ আমের জাত অনুযায়ী কিছু কিছু গুটি আমের মুকুল চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে ফুটতে পারে। তবে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সকল গাছে মুকুল ফুটবে। এই মুহূর্তে আমচাষিদের করণীয় হচ্ছে, প্রতি লিটার পানিতে সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক ১ মিলি ও এর সাথে সালফার গ্রুপের ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। পরগাছা থাকলে এখনই কেটে দিতে হবে।