চাঁপাইনবাবগঞ্জে অর্ধেক জনবল দিয়েই ২০৪১ এর লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিস। বাস্তবায়ন করছে ‘রাজশাহী বিভাগে মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প’ ও ‘ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার প্রকল্প’ নামে ২টি প্রকল্প।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলা মৎস্য অফিসারের কার্যালয় ও জেলার ৫ উপজেলায় সরকারের রাজস্ব খাতের আওতায় অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৫৪টি। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ২৮ জন এবং শূন্য রয়েছে ২৬টি পদ। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় জনবল না থাকায় কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হচ্ছে।
সূত্রমতে, মৎস্য অধিদপ্তরের অধীন রাজস্ব খাতভুক্ত জেলা মৎস্য অফিসারের কার্যালয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ অনুমোদিত পদ হচ্ছে ১৩টি। এর মধ্যে উপসহকারী পরিচালক, মৎস্য জরিপ কর্মকর্তা, উপসহকারী প্রকৌশলী, হিসাবরক্ষক ও অফিস সহায়কের পদগুলো শূন্য রয়েছে।
অন্যদিকে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত সোনামসজিদ স্থলবন্দর ফিশারিজ কোয়ারেন্টাইন অফিসারের দপ্তরে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদটি শূন্য রয়েছে।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তরে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৬টি। এর মধ্যে মৎস্য সম্প্রসারণ ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা ও ক্ষেত্রসহকারীর পদ ২টি শূন্য রয়েছে। শিবগঞ্জ উপজেলায় সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুমোদিত পদ হচ্ছে ৬টি। এর মধ্যে ৩টি পদই শূন্য রয়েছে। শূন্যপদগুলো হচ্ছে- মৎস্য সম্প্রসারণ ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা, সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা ও ক্ষেত্রসহকারী। নাচোল উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়েও অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৬। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ২ জন। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, মৎস্য সম্প্রসারণ ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা, ক্ষেত্রসহকারী ও অফিস সহকারীসহ ৪টি পদই শূন্য রয়েছে।
গোমস্তাপুর উপজেলায় সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়েও অনুমোদিত পদ ৬টি। তার মধ্যে ৩টি পদই শূন্য রয়েছে। পদ ৩টি হচ্ছে- সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা, ক্ষেত্রসহকারী ও অফিস সহায়ক। ভোলাহাট উপজেলাতেও অনুমোদিত পদ ৬টি। তার মধ্যে মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা ও ক্ষেত্রসহকারীর পদ ৩টি শূন্য রয়েছে।
এদিকে খামার ব্যবস্থাপকের দপ্তর, আমনুরা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে খামার ব্যবস্থাপক, হ্যাচারি সহচর ও অফিস সহায়ক এবং নাচোল মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে ক্ষেত্রসহকারী ও অফিস সহায়কের পদগুলো শূন্য রয়েছে। পদগুলোয় লোকবল না থাকায় দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবু থেমে নেই লক্ষ্য অর্জনের কার্যক্রম। অর্ধেক জনবল নিয়েই মাছ উৎপাদনে ২০৪১ সালের লক্ষ্য অর্জনে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করে যাচ্ছেন।
জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় মোট পুকুর আছে ১১ হাজার ৫৪৯টি। এর মধ্যে ৩ হাজার ১৬টি সরকারি, ৮ হাজার ৫৩৩টি বেসরকারি। যার মোট আয়তন ৯৯৮ হেক্টর। এর মধ্যে সরকারি ৭৬৬ হেক্টর ও বেসরকারি ২ হাজার ৪৩২ হেক্টর। মোট জলাশয়ের ১৫ শতাংশ হচ্ছে হচ্ছে পুকুর। অন্যদিকে বিল রয়েছে ৬৩টি, যার আয়তন ৩ হাজার ৪৬৯.৪২ হেক্টর; যা মোট জলাশয়ের ১৬ শতাংশ। প্লাবন ভূমি রয়েছে ৬৯টি, যার আয়তন ৩ হাজার ৪২১.৩ হেক্টর; মোট জলাশয়ের ১৬ শতাংশ। খাল রয়েছে ৩৫টি, যার আয়তন ১৪৬.৭৪ হেক্টর; যা মোট জলাশয়ের ১ শতাংশ। এছাড়া নদী ৪টি। নদীগুলো হলো- পদ্মা, মহানন্দা, পুনর্ভবা ও পাগলা। এই চারটি নদীর আয়তন হচ্ছে ১১ হাজার ৩৩৫ হেক্টর। জেলায় সব মিলিয়ে মোট জলাশয় রয়েছে ২১ হাজার ৫৭০ হেক্টর।
জেলায় মোট মৎস্যচাষি রয়েছেন ৬ হাজার ৫৫৪ জন এবং মৎস্যজীবী রয়েছেন ১০ হাজার ৭৮৫ জন।
২০২১-২২ অর্থবছরে জেলায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয়েছে ২০ হাজার ৮৬১ মেট্রিক টন। ২০০৯-১০ অর্থবছর হতে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ২৯টি অভয়াশ্রম স্থাপন ও মেরামত করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন জলাশয়ে মৎস্যসম্পদ পুনরুদ্ধার, দেশীয় প্রজাতির মাছের ব্রুড ব্যাংক/রিজার্ভার স্থাপন, মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন, পলি দ্বারা ভরাটকৃত সরকারি পুকুর, খাল ও বিল শতভাগ পুনর্খনন, আইনে নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বন্ধ করা, বিল শুকিয়ে মৎস্য আহরণ বন্ধ করা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্ল্যান্ট স্থাপন, মৎস্য চাষ ব্যবস্থা যান্ত্রিকীকরণ ও ডিজিটালাইজড করা, উন্মুক্ত জলাশয়ে পোনা মাছ অবমুক্ত করা, মাছের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির লক্ষে উৎপাদনকারী ও বিপণন সংগঠন তৈরি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান এইসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন- ২০৪১ সালের মধ্যে মাছ উৎপাদনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে লক্ষ্য তা অর্জনে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের জনবল সংকট রয়েছে, কাজ তুলতে কষ্টও হচ্ছে, তারপরও আমরা থেমে নেই। আমাদের এই জেলায় মাছের চাহিদা ২৫ হাজার ৭৬৭ মেট্রিক টন, বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ২০ হাজার ২০ হাজার ৮৬১ মেট্রিক টন। আশা করছি ঘাটতি কাটিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ২৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৪১ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করতে সক্ষম হবো।