বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১ রজব, ১৪৪৬ হিজরি

Last Updated on জুন ২৬, ২০২৪ by

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবহিতকরণ কর্মশালায় ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে পানি সমস্যা নিরসনে কাজ শুরু করেছে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি। এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে ‘বর্ধিত সম্প্রদায় জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্প-খরা (ইসিসিসিপি-ড্রাউট’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতির বিষয়ে কমিউনিটির দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে। ভূউপরিস্থ পানির মজুত বৃদ্ধি করা হবে, এ জন্য বাস্তবায়নকারী সংস্থা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫টি পুকুর ও ২টি খাল পুনর্খনন করবে, ৫০টি ছাদভিত্তিক ম্যানেজ অ্যাকুইফার রিচার্জ (এমএআর) ও একটি পুকুরভিত্তিক ম্যানেজ অ্যাকুইফার রিচার্জ (এমএআর) সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করবে। এছাড়াও খরাসহিষ্ণু ফল ও ফসল চাষে সহযোগিতা করবে।
বুধবার সদর উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে প্রকল্পটির অবহিতকরণ কর্মশালায় এইসব তথ্য জানানো হয়। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)’র সহযোগিতায় প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি এই কর্মশালার আয়োজন করে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা তাছমিনা খাতুনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, উপজেলা চেয়ারম্যান তসিকুল ইসলাম তসি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আঞ্জুমান সুলতানা, পিকেএসএফ’র ইসিসিসিপি-ড্রাউট প্রকল্পের পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সহকারী প্রকল্প সমন্বয়কারী ফিরোজুর রহমান, প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির পরিচালক আলেয়া ফেরদৌস।
সূচনা বক্তব্যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন প্রকল্পের ফোকাল পার্সন আব্দুস সালাম। সঞ্চালনা করেন মোমেনা ফেরদৌস অরণী।
চেয়ারম্যান তসিকুল ইসলাম তসি উপস্থিত সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলেন, এই প্রকল্পটি যুগোপযোগী একটি প্রকল্প। তবে, এটি বাস্তবায়বায়ন খুবই কঠিন একটি বিষয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান কম, দিন দিন পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। আর এই সমস্যাটা দীর্ঘদিনের, যার সমাধান করা জটিল একটি প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, একমসয় বরেন্দ্র অঞ্চলে ৫০-৬০ ফুট গভীরে গেলেই পানি পাওয়া যেত, কিন্তু এখন ১৪০-১৫৫ ফুট গভীরেও ঠিক মতন পানির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
চেয়ারম্যান তসি বলেন, এর থেকে আরো গভীরে গিয়ে যে পানির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে তা খাবার জন্য নিরাপদ নয়। তবে, যেভাবে লেয়ারটা নিচে নেমে যাচ্ছে তাতে একসময় আমরা আর এই নিরাপদ পানি নাও পেতে পারি, যা আমাদের জন্য হুমকিস্বরুপ। কারণ এখন গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে, আর উষ্ণ জলবায়ুর কারণে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কম, আগে যেভাবে পানি ভূগর্ভে পুনরায় প্রবেশ করত তাতে পানির স্তরটি উপরে থাকত, তবে এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তা আর সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, এখন পিকেএসএফের এই প্রজেক্টের মাধ্যমে বনায়ন করা, পুকুর খনন করা, পানি রিজার্ভ করার ব্যবস্থা করা হলে এই জেলার মানুষ পানির হাহাকার থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। আর তাছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সকল সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এই প্রকল্পের কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে আন্তরিক সহযোগিতা করলে জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলায় এলাকার সাধারণ জনগণ, জনপ্রতিনিধি, প্রান্তিক কৃষক ও দরিদ্র মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতে হবে এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি কম পানি লাগে এমন ফসল উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছমিনা খাতুন বলেন, বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় পানির হাহাকার ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম, খরা অত্যন্ত বেশি, উষ্ণ আবহাওয়া-তাপমাত্রা বেশি, আর জলবায়ু পরিবর্তনশীলতা এবং পর্যাপ্ত পানির অভাব এবং চরম উষ্ণ আবহাওয়ায় এই জেলাকে দুর্যোগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। তিনি বলেন, এর জন্য আমরা বনায়ন করতেই পারি; কিন্তু এটা ভাবতে হবে যে, সেই বনায়নের গাছগুলোর জন্য কতটুকু পানির প্রয়োজন এবং আমাদের সেই মূহূর্তে সেই পরিমাণ পানি রিজার্ভে আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে যদি পানি সংরক্ষণ করার জন্য ট্যাংকি বা পানির আধারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, তাহলে সেটা খুবই উপকারী হবে। এছাড়াও, নতুন করে পুকুর খনন বা পুরোনো পুকুর পুনর্খননের ব্যবস্থা করা গেলে ফসলাদি উৎপাদনের ক্ষেত্রে তা ব্যবহারযোগ্য হবে। কারণ চলতি বছর সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হবার কারণে এই জেলার আমের ফলন অনেকাংশে কমে গেছে, যে কারণে দেশের বাইরে তো দূরের কথা, স্থানীয় চাহিদা মেটানোই সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া, তীব্র তাপদাহ, খরা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে নতুন কিছু সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে অতিখরার কারণে পানিসংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বেশিরভাগ জমি কোনো না কোনোভাবে অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। যার ফলে একদিকে প্রান্তিক কৃষক হারাচ্ছে তাদের কৃষি জমি আর অন্যদিকে কমছে কৃষি উৎপাদন।
তাছমিনা খাতুন আরো বলেন- আর যেহেতু পানির লেয়ারটা দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে, তাই কি করলে পানির লেয়ারটা নিচে নেমে যাবে না বা আগের অবস্থানে কিছুটা হলেও স্থির থাকবে, সেই সচেতনতা আমাদের সাধারণ মানুষের মধ্যে তুলে ধরতে হবে। কারণ এই প্রকল্প চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় টিম গঠন করে কাজ করবে বলছে, সেখানে সেই টিমগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন উঠান বৈঠক ও মাসিক মিটিংয়ের মাধ্যমে এলাকার প্রান্তিক কৃষক ও নারীদেরকে কম পানির ব্যবহার নিশ্চিত করে খরাসহিষ্ণু ফসল ও ফলচাষ করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং সকলেই তারা পানির ব্যবহার ও পানির অপচয় সম্পর্কেও অবহিত হবে। তিনি প্রয়াসকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন বলে তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

About The Author

শেয়ার করুন