চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিল্পী নজরুল ৩০ বছর ধরে রং তুলির আঁচড় দিয়ে চলেছেন

94

ডি এম কপোত নবী : চাঁপাইনবাবগঞ্জ এমনিতেই গোটা বিশ্বে আমের জন্য বিখ্যাত একটি জেলা। এ জেলাতে রয়েছে প্রাচীন গৌড় নগরীর অনেক নিদর্শন। কানসাট, শিবগঞ্জ, ভোলাহাট, রহনপুরে রয়েছে মসজিদ, জমিদার বাড়ি। সোনামসজিদে রয়েছে হযরত শাহনেয়ামতুল্লার সমাধী। এ ছাড়াও কাঁসা-পিতল, লাক্ষ্মা, কলাইয়ের রুটি, গম্ভীরা, আলকাপ গান, পট গান, মেয়েলি গীতসহ আরো নানা রকম স্থানীয় কৃষ্টিকালচারে পরিপূর্ণ এ চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এ জেলার মাটিতেই শুয়ে আছেন দেশকে স্বাধীন করার জন্য লড়ায়ে শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বীর শ্রেষ্ঠ। রয়েছে শিবগঞ্জ এর আদি চমচম আরো রয়েছে নসিপুরের দই। মোট কথা হাজার গুণে ভরপুর এ জেলা।


বর্তমান যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। নি¤œ আয়ের থেকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। দিন দিন উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সে সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জও হচ্ছে আধুনিক। নতুন নুতন উঁচু ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অটো রাইস মিল, আধুনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, বিশাল পরিসরে এরই মাঝে শেষ হতে চলেছে সদর হাসপাতালের নির্মাণ কাজ । কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে পর্যটন শিল্প এলাকা গড়ার কাজ। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের।

জীবনে বেঁছে থাকতে হলে কর্ম করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কতরকমের কাজ করে মানুষ টিকে আছে সেটা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর দিকে দেখলেই বোঝা যায়। তেমনি কর্ম করে জীবন চালান এক ব্যক্তির নাম শিল্পী নজরুল। রং আর তুলি নিয়েই তার কাজ। দেখতে কালো আর পাতলা, মাথায় বড় বড় জটবাঁধা চুল, মুখে দাড়ি, লম্বা গোঁফ নজরুলের। আর পাঁচটা মানুষের মত তাঁর জীবন নয়। তিনি একটু ব্যতিক্রম। রমযান মাসে অফিস থেকে ইফতারির আগে বাসায় যাবার পথে একটি রিকশার গ্যারেজের সামনে দেখলাম নজরুলকে। আপন মনে রং তুলি দিয়ে রিকশার পেছনের বডিতে প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকছেন। আমি অনেকক্ষণ দেখলাম আপন মনে, নিখুঁতভাবে নিপূণহাতের ছোঁয়ায় নজরুল এঁকে চলেছেন। পরে কাছে গিয়ে বললাম কি করছেন। কেমন লাগে আঁকাআঁকি করতে। জবাবে নজরুল ঘাড়টা ঘুরিয়ে বললেন, এখন কাজ করছি কথা বলতে পারব না। আমি ইফতারির সময় হয়ে যাচ্ছে বলে ৫ মিনিট সময় চেয়ে নিলাম।


নজরুল দৈনিক গৌড় বাংলাকে জানান, ছোট বেলায় বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছি। শহরের উদয়ন মোড়ে আমার বাড়ি। তবে বেশির ভাগ সময়েই আমি বাইরে থাকি। বাড়িতে থাকতে ভালো লাগে না। নজরুল আরো জানান, বিভিন্ন দেয়ালে, প্রাথমিক স্কুলে, অটো রিকশার পেছনের বডিতে নানা রকম দৃশ্য আঁকি। এ জন্য অনেক আগে থেকে আমাকে সবাই শিল্পী নজরুল হিসেবেই চিনে এবং জানে। আমি সেভাবে কারো কাছে কাজ শিখিনি। নিজে নিজেই কাজ করতে করতে হাত পাকা করেছি। কেমন কাজ হচ্ছে এবং রোজগার কেমন জানতে চাইলে নজরুল জানান, আগে অনেক কাজ করতাম। সারা দিন রং আর তুলি নিয়েই সময় কাটত। কিন্তু বর্তমানে আর তেমন কাজ হয় না। এখন আর মানুষ হাতে আঁকা দৃশ্য বা ছবি করে না। ডিজিটাল মেশিন হবার কারণে সহজ হয়েছে, সময়ও কম লাগছে। সে জন্য মানুষ এখন মেশিনে ছাপিয়ে বিভিন্ন স্টিকার তৈরি করছে। এসবের কারণে কোন রকমে টিকে আছি। কতদিন এ কাজ করবেন জানতে চাইলে নজরুল জানান, এ পেশাটা হচ্ছে আমার নেশা। আল্লাহ যতদিন হায়াত দিয়েছেন ততদিন এ কাজই করব। নজরুলের সাথে কথা বলে বুঝলাম তিনি এ রং আর তুলিকে কতটা আপন করে নিয়েছেন।