ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আম। এছাড়াও বগুড়ার দই, শেরপুরের তুলসীমালা ধান এই স্বীকৃতি পেয়েছে। এ নিয়ে দেশের সর্বমোট ১৫টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেল।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের (ডিপিডিটি) ২৬ জুনের সভায় নতুন করে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে ডিপিডিটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে। ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হয়।
২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা তৈরির পর জিআই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় ডিপিডিটি। এরপর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জিআই পণ্য হিসেবে ২০১৬ সালে স্বীকৃতি পায় জামদানি শাড়ি। এরপর একে একে স্বীকৃতি পেয়েছে ইলিশ, ক্ষীরশাপাত আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহী সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম। নতুন করে এ তালিকায় যুক্ত হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আমসহ চার পণ্য। এখন থেকে পণ্যগুলো বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পাবে।
ডিপিডিটি সূত্র জানায়, এখনো আরো অন্তত ২৪টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতির আবেদন প্রক্রিয়াধীন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বাংলাদেশ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম, কুষ্টিয়ার তিলেখাজা, কুমিল্লার রসমালাই, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম, নোয়াখালীর মহিষের দুধের দই, লতিরাজ কচু, সোনালি মুরগি, সাবিত্রী রসকদম, চাচুরি বিলের কৈ মাছ, নাক ফজলি আম, সুন্দরবনের মধু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি, জামালপুরের নকশিকাঁথা, ফুটি কার্পাস তুলা প্রভৃতি। কোনো একটা দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও মানুষের সৃজনশীলতা মিলে কোনো পণ্য তৈরি হলে তাকে বলা হয় সেই দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। শুধু বাংলাদেশেই উৎপাদিত হয় এমন ১৫টি পণ্য আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব কর্তৃপক্ষ থেকে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অন্য কোনো দেশে নয়, এই পণ্যগুলো শুধু বাংলাদেশেই উৎপাদন করা সম্ভব।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ফজলি আমের জি আই সনদ দাবির পক্ষে আবেদনকারী মুনজের আলম মানিক জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের বিদেশের পাশাপাশি দেশজুড়েও সুনাম রয়েছে। স্বাদ, গন্ধ ও সব মিলিয়ে এ জেলার আমের স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের কারণেই ৪ জাতের আমের জি আই সনদ পাওয়ায় আমরা গর্বিত। তবে ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি খিরসাপাত আম এবং গত বছরের ২২ মার্চ যৌথভাবে ফজলি আম জি আই সনদ পাওয়ার পরও জি আই ট্যাগ থেকে বঞ্চিত আমচাষীরা। এর মধ্যেই নতুন করে আরো ২টি জাতের আম জি আই স্বীকৃতি পেল। তাই দ্রুত এ ৪ জাতের আমে ট্যাগ লাগানোর ব্যবস্থা হলে আমের গুরুত্ব আর্ন্তজাতিকভাবে যেমন বাড়বে, কৃষকও তেমনি লাভবান হবে। সেসাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী আদি চমচম, দম মিছরিসহ ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলোর স্বীকৃতির জন্য আবেদন করতে হবে।