চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ অনেক সচেতন ও শান্তিপ্রিয় : পুলিশ সুপার

24

‘পুলিশের সঙ্গে কাজ করি, মাদক-জঙ্গি-সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়ি’ এই প্রতিপাদ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নানা আয়োজনে কমিউনিটি পুলিশিং ডে উদ্্যাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার জেলা পুলিশ ও কমিউিনিটি পুলিশিং ফোরামের যৌথ আয়োজনে র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ উপলক্ষে সকালে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিতে অংশ নেন জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক, পুলিশ সুপার টি.এম. মোজাহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফজল-ই-খুদা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান তসিকুল ইসলাম তসি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সামিউল হক লিটন, জেলা পরিষদ সদস্য হালিমা বেগম, প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির নির্বাহী পরিচারলক হাসিব হোসেনসহ জেলার উন্নয়ন সংস্থা প্রয়াস, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
র‌্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নবাবগঞ্জ ক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভায় মিলিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের আহŸায়ক আলহাজ্ব রুহুল আমিন। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রথমেই পুলিশ সুপার জানান, জেলার চারটি উপজেলাতেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, মাঝখানে একটা খারাপ সময়ের কারণে আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জকে দোষারোপ করছিলাম। এখন সেটা কেটে গেছে। এখানে কিন্তু সারাবছর ঝুট-ঝামেলা নেই। তিনি বলেন, অন্যান্য এলাকা বা জেলার থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ অনেক সচেতন ও শান্তিপ্রিয়।
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া হ্যাক করার বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আপনার যারা ইয়াহু মেইল ব্যবহার করে ফেসবুক আইডি চালান, তাদের ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ সময় তিনি সবাইকে জিমেইল ব্যবহার করে ফেসবুক চালানোর পরামর্শ দেন। এ সময় তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ছোট সন্তানদের নিয়ে বাইরে গেলে তাদের হাতে বা তাদের বইয়ের মধ্যে আপনার মোবাইল ফোন নম্বরটি লিখে দিবেন। যাতে করে কোথাও হারিয়ে গেলে বা রাস্তা ভুল করলে তারা যেন রাস্তার পাশে কমিউনিটি পুলিশকে নম্বরটি দেখালে তারা যেন সাহায্য করতে পারে। তিনি এও বলেন, আপনার মোবাইল ফোন নম্বর সন্তানকে দেবেন, মোবাইল ফোন নয়। আপনারা আপনাদের সন্তানদের বাঁচান, তাকে স্কুলে পাঠান, বিকেলে মাঠে ফুটবল খেলান কিন্তু মোবাইল সংস্কৃতির সাথে যুক্ত করিয়েন না।
জেলা পুলিশের শীর্ষ এ কর্মকর্তা বলেন, আপনার সন্তানের মনে পুলিশ সম্পর্কে একটা ইতিবাচক ধারণা দেন। আমরা চাইব, আপনারা আপনার সন্তানদেরকে পুলিশকে বন্ধু ভাবান। এ সময় তিনি যৌথ পরিবারের গুরুত্ব উল্লেখ করেন এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর পাশে থাকবেন বলে আশ্বাস দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক গৌড় বাংলার সম্পাদক ও প্রয়াসের নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেন বলেন, ২০০৭ ও ২০০৮ সাল এ দুই বছর কমিউনিটি পুলিশের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল আমার। তিনি বলেন, “কমিউনিটি পুলিশকে যদি আমরা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে আমাদের কমিউনিটি বা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় শান্তি-শৃঙ্খলা এবং সামাজিকতা রক্ষা করা ও উন্নয়ন সবকিছুই সমানভাবে এগিয়ে যাবে। আগের সময়ের চেয়ে এখনকার কমিউনিটি পুলিশিংয়ের কাজ অনেকটা বেগবান ও অনেক সুসংগঠিত বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। এজন্য অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য আমাদের সুযোগ্য পুলিশ সুপার মহোদয়ের।”
হাসিব হোসেন বলেন, আজকের যে প্রতিপাদ্য ‘কমিউনিটি পুলিশের সঙ্গে কাজ করি, মাদক-জঙ্গি-সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়ি’ আমরা যদি এটি প্রকৃত বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে আজকের প্রতিপাদ্য সফল হবে। আমি মনে করি, জনতার সাথে পুলিশ আছে। কিন্তু যে ব্যক্তি সুনাগরিক নয়, তাকে সুনাগরিক করার দায়িত্ব আমাদের।
সভাপতির বক্তব্যে সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের আহŸায়ক আলহাজ্ব রুহুল আমিন বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ একটি শান্তিপ্রিয় জায়গা। জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রসাশনের এদের যে সমন্বয় তার মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী এখন অত্যধিক আনন্দিত এবং গর্বিত। আমাদের একটা জিনিস মনে রাখতে হবে যে, কারো উপকার করতে না পারলে কারো অপকার করব না। এই চিন্তা-ভাবনাটা আমাদের মাথায় থাকতে হবে। তাহলে আমাদের দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তিনি বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং হওয়ার কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অনেক ভালো আছে। এই কমিউনিটি পুলিশিংকে আগামীতে আরো শক্তিশালী ও বেগবান করব। এ সময় তিনি দলমত নির্বিশেষে সবাইকে কাজ করার আহŸান জানান তিনি।
আলোচনা সভা শেষে পুলিশিং ডে উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।
উল্লেখ্য, এ সময় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।