চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এবং ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ

234

আব্দুর রাকিব

শিল্পবিপ্লবের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো- Industrial Revolution। আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধে দৈহিক শ্রমের পরিবর্তে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি ও তার গুণগতমানের ক্ষেত্রে যে ব্যাপক উন্নতি হয়, তাকেই সাধারণভাবে ‘শিল্পবিপ্লব’ বলা হয়।
ইউরোপের মধ্যে ইংল্যান্ডেই প্রথম শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়। প্রথম শিল্পবিপ্লবটি শুরু হয়েছিল ১৭৮৪ সালে, বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে। মানুষের হাজার হাজার বছরের সভ্যতার বিকাশে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে বাষ্পীয় শক্তির আবিষ্কার।
১৮৭০ সালে দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবে বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট আবিষ্কারের মাধ্যমে ঘটে তৃতীয় শিল্পবিপ্লব। তৃতীয় শিল্পবিপ্লবে উৎপাদনকে স্বয়ংক্রিয় করতে ইলেক্ট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়। আগের তিনটি শিল্পবিপ্লবকে ছাড়িয়ে গেছে আজকের যুগের ডিজিটাল বিপ্লব, যাকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মূলত তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের ব্যাপক বর্ধিত সংস্করণ, তবে এর রয়েছে বহু স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য।
বিশ্ব এ মুহূর্তে একটি প্রযুক্তিগত বিপ্লবের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে আমাদের জীবনযাত্রার, কাজ করার ও পরস্পরের যোগাযোগের পথ ও পদ্ধতিগুলো মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। আমরা যে পদ্ধতিতে দৈনন্দিন জীবন-যাপন করি, যেভাবে ব্যবসা ও বাজার ব্যবস্থাপনা করি, যেভাবে অফিস করি, একে অপরের সাথে ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক যোগাযোগ ও লেনদেন করি, তার সবকিছুই একটা ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব।
পুনঃ পুনঃ হিউম্যান ইনপুট দিতে হয় এমন শ্রমশক্তির কাজে রোবট ব্যবহার এখন খুব সাধারণ ঘটনা। স্বল্পদক্ষ শ্রমিক, ক্যাশিয়ার, বিভিন্ন পরিষেবা খাতের কল সেন্টার, টেকনিক্যাল রিপোর্টিংয়ের কাজ, কারখানার ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, যে কোনো বিপদজনক কাজ, নির্মাণশ্রম, কিংবা নিরাপত্তা প্রহরী বা গৃহস্থালির কাজ ইত্যাদি সব কাজই রোবট মানবশ্রমিকের স্থান দখল করতে শুরু করেছে। এতে করে শ্রম খরচ ও মানবিক ত্রুটি উভয়ই কমে আসছে।
ডিজিটাল বিপ্লবকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হিসেবে প্রথম সংজ্ঞায়িত করেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়াব তাঁর লেখা ‘দ্য ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন’ গ্রন্থে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এ গ্রন্থে তিনি চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এ ধারণার ব্যাপক প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেয়। তারও আগে ২০১১ সালে একদল জার্মান বিজ্ঞানী শিল্প-কলকারখানাগুলোয় কীভাবে অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করা যায় বা ডিজিটাল কৌশল প্রয়োগ করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। যেখানে কম জনবল দিয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে পণ্য উৎপাদন সহজ হবে। সেখান থেকেই মূলত চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ধারণাটির উদ্ভব। উল্লেখ করা যেতে পারে, ইন্টারনেট আবিষ্কারের ফলে নানা ধরনের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ঘটে দ্রুতগতিতে। ডিজিটাল বিপ্লব বা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য হাইটেক করপোরেশন ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যেমন- মাইক্রোসফট, অ্যাপল, গুগল, অ্যামাজন, আলিবাবার মতো অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। প্রযুক্তিকে নির্ভর করে গড়ে উঠেছে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে মহাকাশে ভ্রমণের জন্য আধুনিক মহাকাশযান তৈরির প্রতিষ্ঠান। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এসব প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজসাধ্য করার জন্য নানা রকমের ডিজিটাল উদ্ভাবন ও সেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সব ধরনের সেবা আমরা পাচ্ছি মুহূর্তে। সারা দুনিয়া এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা এদের সেবা ছাড়া অচল। উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নি¤œবিত্ত প্রত্যেকেই আমরা ডিজিটাল সেবার আওতাভুক্ত। সেলফোনে দশ টাকার টকটাইম কেনা থেকে শুরু করে নেটফ্লিক্সে সদ্য নির্মিত হলিউড মুভি দেখা, অনলাইনে খাবার অর্ডার করা, ঘরে বসে বৈদ্যুতিক বিল দেওয়া, জমির ই-পর্চা ডাউনলোড, খাজনাসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিল পরিশোধ এমনকি দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি কেনা- সবই এখন ডিজিটাল বিপ্লবের অবদান। ডিজিটালাইজেশনের কল্যাণে গত এক দশকে বদলেছে অনেক কিছু। টেন্ডারবাজির সেই জামানাও এখন আর নেই বললেই চলে। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও ল্যাপটপ/কম্পিউটার থাকলে ঘরে বসেই এখন জমা দেওয়া যায় টেন্ডার। ডিজিটাল এ যুগে কী করা সম্ভব? তার চেয়ে জানা ভালো কী করা যায় না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প পূরণের পর নতুন একটি রূপকল্প দিয়েছেন। সেটি হলো ডিজিটাল বাংলাদেশের ওপর দাঁড়িয়ে ২০৪১ সাল নাগাদ একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী, সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ধারাবাহিক কার্যক্রমে তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠায় স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ ভিশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠিত হয়।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১’ এর আওতায় প্রধান অঙ্গ হবে স্মার্ট শিক্ষা, স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট বাণিজ্য, স্মার্ট পরিবহন ইত্যাদি। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১’ বাস্তবায়নে সরকার ১৪টি সিদ্ধান্ত নেয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ শিক্ষার্থীদের অনলাইন কার্যক্রম নিশ্চিতে ‘ওয়ান স্টুডেন্ট, ওয়ান ল্যাপটপ, ওয়ান ড্রিম’র আওতায় শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, স্মার্ট ও সর্বত্র বিরাজমান সরকার গড়ে তুলতে ডিজিটাল লিডারশিপ অ্যাকাডেমি স্থাপন, বাংলাদেশ নলেজ ডেভেলপমেন্ট পার্ক নির্মাণ ও পরিচালনা ইত্যাদি।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথকে সুগম করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ জুলাই ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) স্থাপিত শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের উদ্বোধন করেন। উদ্যোক্তা তৈরি এবং জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানি গড়ে তুলতে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজনেস ইনকিউবেটর থাকলেও বাংলাদেশে তা এবারই প্রথম। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা, বিশ্বদ্যিালয়ের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের যোগসূত্র স্থাপন করে গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এতে সরকারের খরচ হয়েছে ১১৭ দশমিক ৭ কোটি টাকা টাকা।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে এই ইনকিউবেটর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প-২০২১ আজ বাস্তবতা। এই ধারাবাহিকতায় জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষে আইসিটি বিভাগ ও আওতাধীন সংস্থাসমূহ দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতেও সক্ষম হয়েছে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুঠোফোনের একচেটিয়া বাণিজ্য ভেঙে তা মানুষের কাছে সহজলভ্য করেন। সরকারের বিভিন্ন নীতি-সহায়তার ফলে বর্তমানে দেশে হাইটেক পার্কসহ বিভিন্ন স্থানে স্যামসাং, ওয়ালটন, সিম্ফোনি, এমআই ফোন, শাওমিসহ দেশী-বিদেশী ১৪টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে মুঠোফোন ও ল্যাপটপ উৎপাদন করছে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তা রপ্তানি করছে। শুধু রপ্তানিই নয় উল্লিখিত কোম্পানিগুলো দেশের মুঠোফোন চাহিদার ৭০% পূরণও করছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব লাভ করার আগে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম ছিল ৭৮ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতি এমবিপিএস ৩০০ টাকার নিচে। জনগণের দোরগোড়ায় সহজে, দ্রত ও স্বল্প ব্যয়ে সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে একযোগে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র উদ্বোধন করেন, যা বর্তমানে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার বা ইউডিসি নামে সুপরিচিত। এই সেন্টার থেকে গ্রামীণ জনপদের মানুষ খুব সহজেই তাদের বাড়ির কাছে পরিচিত পরিবেশে জীবন ও জীবিকাভিত্তিক তথ্য ও প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন। বর্তমানে সারা দেশে ৮ হাজার ২৮০টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ৩০০-এর অধিক ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা জনগণ গ্রহণ করতে পারছেন। দেশে বর্তমানে মুঠোফোন সংযোগের সংখ্যা ১৮ কোটির অধিক। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বর্তমানে প্রায় ১৩ কোটি।
২৮ নভেম্বর ২০১৯ সালে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশের টায়ার ফোর ডেটা সেন্টার। এর ক্ষমতা ২ পেটাবাইট। ১ পেটাবাইট প্রায় ১০ লাখ গিগাবাইটের সমান। সে হিসাবে এই সেন্টারের বর্তমান ক্ষমতা ২০ লাখ গিগাবাইট। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে এর ক্ষমতা ৫০ পেটাবাইট পর্যন্ত বাড়ানো হবে। একটি দেশের নাগরিকদের ফিঙ্গার প্রিন্ট, ন্যাশনাল আইডির তথ্যসহ মহাগুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো সংরক্ষণের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ এই ডেটা সেন্টার। এই ডেটা সেন্টার আপটাইম ফোর ফ্যাসিলিটি সার্টিফিকেশন পাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ডেটা সেন্টার এবং বিশ্বের সপ্তম টায়ার ফোর ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার। এই পুরো প্রকল্প ১ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে। ডিজিটাল দুনিয়ায় এটা বাংলাদেশের বলিষ্ঠ পদার্পণ বলা যায়। দেশে স্থাপন করা জাতীয় ফোর টায়ার ডেটা সেন্টার থেকে বছরে ৩৫০ কোটি টাকার বেশি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
ডিজিটাল অর্থনীতির ক্ষেত্রেও দেশে ইতিবাচক ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আইসিটি রপ্তানি ২০১৮ সালেই ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে আইসিটি খাতে রপ্তানি ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অনলাইন শ্রমশক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সারের আউটসোর্সিং খাত থেকে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে। ৩৯টি হাইটেক বা আইটি পার্কের মধ্যে ইতোমধ্যে নির্মিত ৯টিতে দেশী-বিদেশী ১৬৬টি প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে বিনিয়োগ ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং কর্মসংস্থান হয়েছে ২১ হাজার, মানবসম্পদ উন্নয়ন হয়েছে ৩২ হাজার। নারীর ক্ষমতায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ হাজার ৫০০ নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর ২০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান ‘উবার’ ও ‘পাঠাও’ বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টরে বিপ্লব ঘটিয়েছে। আশা করি স্মার্ট বাংলাদেশ লক্ষ্য অর্জনে ‘উবার’ এবং‘পাঠাও’য়ের মতো আরো ব্র্যান্ড আমাদের উন্নয়নের অংশীদার হবে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ স্যাটেলাইট এলিট ক্লাবের সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। এভাবে বর্তমান সরকার বিভিন্ন সেক্টর ডিজিটালাইজেশন করে এগিয়ে যাচ্ছে পূর্ণাঙ্গ স্মার্ট বাংলাদেশের পথে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪টি মাইলস্টোন দিয়েছেন। প্রথম ২০২১ সালের রূপকল্প ডিজিটাল বাংলাদেশ, যা আজ অর্জন করে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, তৃতীয় ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং চতুর্থ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ সালের জন্য। সরকারের বর্তমান লক্ষ্য ২০২৫ সালে আইসিটি রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান ৩০ লাখে উন্নীত এবং সরকারি সেবার শতভাগ অনলাইনে পাওয়া নিশ্চিত করা। আরো ৩০০ স্কুল অব ফিউচার ও ১ লাখ ৯ হাজার ওয়াই-ফাই কানেক্টিভিটি, ভিলেজ ডিজিটাল সেন্টার এবং ২৫ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তরুণ বয়সে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন আর্কিটেক্ট অব ডিজিটাল বাংলাদেশ সজীব ওয়াজেদ জয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের যে ভিত্তি তৈরি করে গেছেন, সে পথ ধরেই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এক যুগের বেশি পথ চলায় প্রমাণিত হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনার এক উন্নয়ন দর্শন। এখন লক্ষ্য ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ এবং তা অচিরেই পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে।

মু. আব্দুর রাকিব : প্রভাষক, বাংলা বিভাগ, গোমস্তাপুর সোলেমান মিঞা কলেজ
মোবাইল নং- ০১৭১৫ ২৭০২১৭