ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আঘাত ও জানমাল রক্ষায় চট্টগ্রামের উপকূলীয় চার উপজেলাসহ জেলার ১৫ উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকা এবং ভোলা জেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৮৮টি আশ্রয় কেন্দ্র এবং প্রায় ৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেয়ার পরই ক্ষয়ক্ষতি কমাতে মূল কার্যক্রম শুরু করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, সংকেত উপরে উঠলে আমরা নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করব। ৪ নম্বর সংকেত দেখাতে বললে বন্দরে স্টান্ডিং কমিটির মিটিং হবে এবং অন্যান্য বিভিন্ন কমিটিকে অ্যালার্ট করা হবে। সংকেত ৫-এ গেলে জেটিতে থাকা জাহাজ বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রাথমিক চাহিদা মিটানোর জন্য ১৫টি উপজেলায় ত্রাণ হিসেবে চাল ও নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিদ্যমান আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের লক্ষে প্রস্তুত রাখার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জেলা মাধ্যমিক এবং প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তারা জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র মোকাবিলায় প্রস্তুতিমূলক সভা করেছেন।
অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এখান থেকে জরুরি হটলাইন নম্বরে (০২৩-৩৩৩-৬৩০-৭৩৯) ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও সেবা পাবেন চট্টগ্রামবাসী। পাশাপাশি জানমালের ক্ষতি কমাতে ৪১টি ওয়ার্ডে ৯০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ভোলায় মোকাবিলায় ৩ ধরনের প্রস্তুতি : ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় ভোলা জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৪৬টি আশ্রয় কেন্দ্র। এছাড়াও মাঠে থাকবে ১৮ হাজার ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক। গঠন করা হয়েছে ৯৮টি মেডিকেল টিম। সাত উপজেলায় খোলা হচ্ছে মোট ৮টি কন্ট্রোল রুম।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী এ তথ্য জানান।
জেলা প্রশাসক জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ দুর্যোগপূর্ব, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ের প্রস্তুতি। ১৩ হাজার ৬০০ সিপিবি’র স্বেচ্ছাসেবক ও ৫ হাজার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মী মাঠে থাকার জন্য রয়েছেন। জেলেদের নিরাপদে ফিরে আসার জন্য বলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৯০ ভাগ জেলে ঘাটে ফিরেছেন। এছাড়া মাঠের প্রায় ৯০ ভাগ পাকা ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকালের (আজ শুক্রবার) মধ্যে বাকিটা হয়ে যাবে।
তিনি আরো জানান, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ মেডিকেল টিম দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। জেলার প্রাণিসম্পদ রক্ষায় ২১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। সকল ধরনের জরুরি পরিষেবা ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত রয়েছে। আমাদের বাঁধগুলোর সুরক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। আমরা সকলে একসাথে মিলে আসন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করে যাবো। জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সর্বনি¤œ রাখা।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ভোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৩৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে। এসব বাঁধ বর্তমানে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো ইতোমধ্যে মেরামত করা হয়েছে। তারপরও যেসব বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে, সেগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। একইসাথে আমরা নদী তীরবর্তী এলাকার বাঁধগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। সবাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।
সভায় আরো বক্তব্য দেনÑ জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজীত কুমার, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. দেলোওয়ার হোসেন, জেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির উপপরিচালক আব্দুর রশিদ, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলামসহ অন্যরা।