গোমস্তাপুরে কোরবানির জন্য প্রস্তুত সাড়ে ৩২ হাজার পশু

13

আল মামুন বিশ্বাস : চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ঈদুল আজহার কোরবানির জন্য পালন করা হয়েছে ৩২ হাজার ৪৬১টি পশু। এর মধ্যে চাহিদা রয়েছে ২৮ হাজার ৭৬৫টি পশুর। চাহিদার চেয়ে ৩ হাজার ৯৬টি বেশি পশু পালন করা হয়েছে বলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৯৮০ জন খামারি রয়েছে। এছাড়া অনেকে বাড়িতে গরু, ছাগল, ভেড়া মহিষ পালন করছেন। গোমস্তাপুর উপজেলায় কোরবানির জন্য ২১ হাজার ৮৭৮টি গরু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ষাঁড় ৭ হাজার ৯৫৪টি, বলদ ৬ হাজার ৭৯৮টি ও গাভী ৭ হাজার ১২৬টি, মহিষ রয়েছে ৩৮টি। এছাড়া ছাগল রয়েছে ৬ হাজার ৬৬টি ও ভেড়া ৩ হাজার ৫৮৯টি।
পশু পালনকারী ১ হাজার ৬০ জনকে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। ৬০ জন কসাইকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া খামারিসহ পশুপালনকারীদের কৃমিনাশক ট্যাবলেট, ভ্যাকসিনসহ তদারকি করা হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে।
রাজু ডেইরি ফার্মের মালিক গোলাম মোর্ত্তুজা বলেন, তার বাবা নুহু দীর্ঘদিন থেকে গরুর খামার করেন। বাবা-ছেলে মিলে তারা খামারে গরু পালন করে চলেছেন। বর্তমানে খামারে কোরবানির জন্য ২৪টি গরু রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে গরুগুলো চট্টগ্রামে নিয়ে যাবেন। ভারতীয় গরু না ঢুকলে ওই গরুগুলো বিক্রি করে লাভবান হবেন বলে তিনি মনে করছেন। তিনি জানান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ চিকিৎসকরা প্রায়ই খামারে এসে খোঁজখবর নিয়েছেন গরুগুলো উপযুক্ত করার জন্য।
কলকলিয়া গ্রামের সাবেদ আলী বলেন, তার খামারে অর্ধশতাধিক গরু রয়েছে। কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা গরুগুলো ঢাকা অথবা চট্টগ্রামে নিয়ে যাবেন। এবার গরুর খাবারের মূল্য ঊর্ধ্বগতি। খরচ এবার বেশি পড়েছে। তিনি প্রাকৃতিক খাবারের সঙ্গে গম ভুট্টা, আলু, খৈল, রাইসব্রানসহ অন্যান্য খাবার দিয়েছেন। ভালো দাম পাওয়ার আশায় তিনি এই এলাকায় বিক্রি না করে ওই এলাকার হাটে নিয়ে যাচ্ছেন।
আরেক খামারি আন্টু মুঠোফোনে বলেন, তিনি ১৬টি গরু ট্রাকে করে চট্টগ্রামে নিয়ে এসেছেন, হাটে রয়েছেন। এখনো বেচাকেনা শুরু হয়নি। অনেকে গরু দেখে চলে যাচ্ছেন। তবে ঈদের কয়েকদিন আগে বেচাকেনা পুরোদমে শুরু হবে।
রহনপুর পৌর এলাকার বড়বাজারে অবস্থিত আশীর্বাদ ডেইরি খামারের কর্মচারী হৃদয় সরকার বলেন, তাদের খামারে উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় জাতের গরু রয়েছে। তার ওজন প্রায় ১৩০০ কেজি। নাম রাখা হয়েছে কালাবাবু। অনেকে কালাবাবুকে দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন খামারে। কালাবাবু প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার খাবার খেয়ে থাকে। নির্ধারিতভাবে দাম না বলতে পারলেও তিনি জানান, গরুর হাটে নিয়ে গিয়ে যেটা সর্বোচ্চ দাম হবে, সে দামেই বিক্রি করা হবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কাওসার আলি বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশু প্রস্তুত করা করা হয়েছে ৩২ হাজার ৪৬১টি। তবে চাহিদার চেয়ে বেশি প্রস্তুত রয়েছে। খামারগুলোর মালিকদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ ছিল। প্রয়োজন হলেই তারা ডাকতেন। খামারিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। বিভিন্ন সময় খামারিতে এসে তিনিসহ প্রাণিসম্পদের অন্য কর্মকর্তারা গরু উপযুক্ত করার জন্য দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবার ১০ থেকে ১২ হাজার গরু ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানের হাটে যাবে। রাস্তায় যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে সুস্থ সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। সেই প্রত্যয়নপত্র দেখালে রাস্তায় কেউ হয়রানি করবেন না বলে তিনি জানান। এবার এ অঞ্চল দিয়ে ভারতীয় গরু না আসায় খামারি ও ব্যবসায়ী ভালো গরুর দাম পাবেন বলে তিনি ধারণা করছেন।