গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মতো খুলনা সিটি করপোরেশনেও মেয়র প্রার্থীর পরাজয় নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিএনপিতে। ফলে গাজীপুর সিটিতে খুলনারই প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, নির্বাচনী মাঠ পর্যবেক্ষণে দুই সিটিতেই বিএনপির জনসমর্থন ও সার্বিক নির্বাচনী পরিস্থিতির বেশ কিছু মিল পরিলক্ষিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রথমত- খুলনা সিটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী নির্বাচনে ভুল পথে এগিয়েছে। খুলনা সিটিতে আগের মেয়র ছিলেন বিএনপির মনিরুজ্জামান মনি। কিন্তু তাকে রেখে মনোনয়ন দেওয়া হয় বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে। কথা ওঠে, লন্ডনে টাকা পাঠিয়ে তিনি মনোনয়ন যোগাড় করেন। তবে যেভাবেই তিনি মনোনয়ন পান না কেন, এর ফলে খুলনা সিটি বিএনপিতে ভাঙন সৃষ্টি হয়।
এদিকে মনিরুজ্জামান মনি গোপনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের পক্ষে গিয়ে কাজ করেছেন বলে জানা যায়। দলীয় কোন্দলে জর্জরিত বিএনপিকে পরাজিত করতে তেমন বেগ পেতে হয়নি খুলনায় ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে। লাখো ভোটের ব্যবধানে জেতেন তালুকদার আব্দুল খালেক। একই চিত্র দেখা যাচ্ছে গাজীপুরে। আগের মেয়র ছিলেন বিএনপির অধ্যাপক আব্দুল মান্নান।
আর্থিক তদবিরের ফলে আব্দুল মান্নানকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে হাসান উদ্দিন সরকারকে। বিষয়টি মান্নান ও তার সমর্থকরা ভালোভাবে নেয়নি। মান্নান ও তার লোকজন এখন যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে কাজ করছে তা ওপেন সিক্রেট। বিভক্ত গাজীপুরের বয়োবৃদ্ধ হাসান উদ্দিন সরকার কি ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের মতো তরুণ নেতার বিপক্ষে নির্বাচনে টিকে থাকতে পারবেন?
দ্বীতিয়ত, খুলনা সিটিতে বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর প্রচারণায় দেখা যায় জামায়াতে ইসলামীর লোকজনকে। তরুণ প্রজন্ম জামায়াতকে যেমন ঘৃণা করে তেমনি এর দোসরদেরও। খুলনা সিটিতে বিএনপির জামায়াত সংশ্লিষ্টতা বড় করেই চোখে পড়েছে। একই অবস্থা গাজীপুরেও। তবে এখানে জামায়াতের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে হেফাজত।
গাজীপুরে হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে হেফাজতের কর্মীদের। তাদের উপস্থিতি বিএনপি ভোট বাড়াবে না কমাবে সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। আবার বিএনপির নিজের জোরের চেয়ে অন্যের উপর ভর করে এগিয়ে যাওয়ার চিরাচরিত বিষয়টি দুই সিটিতেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তৃতীয়ত, অন্ত:কলহের কারণে খুলনা সিটি নির্বাচনের দিন কিছু কিছু কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট দিতে পারেনি। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট জামায়াত কর্মী। গাজীপুরেও এমন অবস্থা হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সাদা চোখে দেখলে দুই সিটি দেশের দুই প্রান্তে হলেও বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা দেখলে দেশজুড়ে তাদের দৈন্যদশাই ফুটে ওঠে। খুলনাতে যে পথে হেঁটে বিপুল ব্যবধানের পরাজয় বরণ করতে হয়েছে, সেই একই পথে হাঁটছে গাজীপুর বিএনপি। এমতাবস্থায় গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভিন্ন ফল আশা করা মানে বোকার স্বর্গে বাসের সমতুল্য। কৃতজ্ঞতা: বাংলা নিউজ পোষ্ট