শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

Last Updated on সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ by

গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত ন্যায়বিচার করা হবে : চিফ প্রসিকিউটর

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নবনিযুক্ত চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নির্মূলে জুলাই গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত ন্যায়বিচার করা হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি রবিবার একথা বলেন।
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার প্রধান আসামি শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করা হবে। জুলাইয়ের গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত ন্যায়বিচার করা হবে। গণহত্যায় জড়িত কোনো তথ্য-প্রমাণ কারো কাছে থাকলে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় জমা দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
দ্রুত ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আহ্বান জানিয়ে চিফ প্রসিকিউটর আরো বলেন, সৎ দক্ষ ও সাহসী বিচারক নিয়োগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কোর্টের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হলে শেখ হাসিনাসহ যারা সম্ভাব্য আসামি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হবে।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, সম্ভাব্য প্রধান অপরাধী দেশ থেকে পালিয়েছেন, তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আইনি প্রক্রিয়া; সেটা আমরা শুরু করব। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অপরাধী প্রত্যার্পণ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে ২০১৩ সালে। শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে এ চুক্তিটি হয়েছিল। তিনি যেহেতু বাংলাদেশে গণহত্যার প্রধান আসামি হবেন মনে করি। বা অধিকাংশ মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। সুতরাং এ প্রক্রিয়া শুরুর মাধ্যমে তাকে আইনগতভাবে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করব।
নিজের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এভিডেন্স কালেক্ট করা। অপরাধটা গোটা বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সব জায়গায় একইসাথে সংঘটিত হয়েছে। প্রত্যেকটা জায়গায় একটা কমন ইনস্ট্রাকশন ছিল গুলি করে সব মেরে ফেলা। এ অপরাধের যে আলামতগুলো সেগুলো সংগ্রহ করে কম্পাইল করা এটা একটা চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আসামিরা এখনো পলাতক প্রধান আসামি দেশত্যাগ করেছেন। অনেকে দেশত্যাগের চেষ্টায় আছেন। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা।
গণহত্যার আলামতের বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রথম প্রায়োরিটি হচ্ছে, যেহেতু ঘটনাগুলো তাজা, এ মামলায় যারা আসামি হবেন তারা এখনো বাংলাদেশে আছেন। অনেকে দায়িত্বেও আছেন। তারা এ আলামতগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করবেন। তাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব এ আলামতগুলো দ্রুত সংরক্ষণ করা, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এগুলো সংগ্রহ করা। প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার হাতে নিয়ে আসা। যেন এ আলামতগুলো আদালতের সামনে উপস্থাপন করতে পারি।
চিফ প্রসিকিউটর সব ধরনের আলামত তদন্ত সংস্থা বা প্রসিকিউশনের কাছে পৌঁছানোর জন্য ছাত্র-জনতাসহ ভুক্তভোগীদের প্রতি আহ্বান জানান।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আরো বলেন, এটা এমন একটা বিচার হবে যে, বিচারের পরে শহীদ পরিবার, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, বাদীপক্ষসহ আসামিপক্ষও মনে করবে তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করা হয়েছে। আসামিদের প্রতি জুলুম করা হবে না আবার ছাড়ও দেয়া হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ অপরাধগুলোর মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে, তদন্তকালে আসামিদের গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন হবে। নিশ্চয়ই আমরা অপরাধীদের গ্রেপ্তার চাইব। আমাদের প্রথম চেষ্টা থাকবে, যারা সম্ভাব্য অপরাধী তারা যাতে আদালতের জুরিসডিকশনের বাইরে চলে যেতে না পারেন। সেটা ঠেকানোর চেষ্টা থাকবে।
আইন সংশোধনের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মাত্র দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমরা সরকারের সাথে বসে এগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিব।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে শনিবার নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এই নিয়োগ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ছাড়াও ট্রাইব্যুনালে আরো চার আইনজীবীকে প্রসিকিউটর পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা হলেন- মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ এবং আব্দুল্লাহ আল নোমান।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম অ্যাটর্নি জেনারেলের পদমর্যাদায় বেতন-ভাতা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। বাকি চার প্রসিকিউটরের মধ্যে মো. মিজানুল ইসলাম অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম ও বিএম সুলতান মাহমুদ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও আব্দুল্লাহ আল নোমান সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদা পাবেন।
দি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ এর সেকশন ৭ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলা পরিচালনার জন্য পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত এ নিয়োগ কার্যকর থাকবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে সংঘটিত অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে।
বৈষম্যবিরোধী টানা ৩৬ দিনের আন্দোলন নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডারদের হামলায় সরকারি হিসাবেই ৮০০ লোক নিহত হয়েছে। এ সংখ্যা আরো বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে বহু মানুষ। এখনো চিকিৎসাধীন কয়েক হাজার মানুষ। এ গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হবে। এরই মধ্যে প্রসিকিউশন টিম নিয়োগ দেয়া হয়।

About The Author

শেয়ার করুন