খুলনাকে হারিয়ে শীর্ষ দুইয়ে থাকা নিশ্চিত করল সিলেট

5

হাসান মুরাদের বলে রায়ার্ন বার্লের ছক্কায় নিশ্চিত হলো সিলেটের জয়। কিন্তু কেউ যেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না! দুই ব্যাটসম্যান আর ফিল্ডাররা স্কোরবোর্ডের দিকে তাকিয়ে একটু পর বুঝতে পারলেন ম্যাচ শেষ। সিলেটের সমর্থকরাও একটু পর বুঝতে পেরে তখন শুরু করলেন উল্লাস। এমনকি আতশবাজি ফুটে উঠতেও সময় লাগল কিছুটা। এমনই ম্যাড়ম্যাড়ে এক ম্যাচ! সিলেট স্ট্রাইকার্সের অবশ্য তাতে আপত্তির কারণ নেই। ম্যাচ জমানোর দায় তো তাদের নেই, জয় এলেই হলো। এই আসরে আগেও ৮ ম্যাচ জিতেছে তারা। তারপরও এই জয় বিশেষ কিছু। খুলনা টাইগার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বিপিএলে নতুন এই ফ্র্যাঞ্চাইজি নিশ্চিত করল শীর্ষ দুইয়ে থাকা। ফাইনালে ওঠার অন্তত দুটি সুযোগ তারা পাচ্ছে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বুধবার টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনা ২০ ওভার ধুঁকতে ধুঁকতে তোলে কেবল ১১৩ রান। ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সিলেটের সফলতম বোলার তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব। তবে দলের সেরা বোলার ছিলেন নিঃসন্দেহে ইমাদ ওয়াসিম। পিএসএলের দলে যোগ দিতে পাকিস্তান ফিরে যাওয়ার পরও আবার তাকে এই ম্যাচের জন্য ফিরিয়ে আনার যৌক্তিকতা প্রমাণ করে দেন এই বাঁহাতি স্পিনার। ৪ ওভারে ¯্রফে ১০ রান দিয়ে তিনি নেন ২ উইকেট। ইমাদের মতো পাকিস্তানে গিয়ে আবার এই ম্যাচের জন্য ফেরা মোহাম্মদ আমির অবশ্য অতটা ক্ষুরধার ছিলেন না। চোটের কারণে আগের ম্যাচ খেলতে না পারা মাশরাফি বিন মুর্তজা এ দিন নেতৃত্ব দিতে ফিরলেও বোলিং করেননি। রান তাড়ায় দ্রুত দুই উইকেট হারালেও জাকির হাসানের ফিফটিতে সিলেট শেষ পর্যন্ত অনায়াসেই জিতে যায় ১৫ বল বাকি রেখে।

থিসারা পেরেরার জায়গায় সুযোগ পেয়ে মৌসুমে প্রথম খেলতে নামা গুলবাদিন নাইবকে দিয়ে এ দিন বোলিং আক্রমণ শুরু করে সিলেট। এই আফগান অলরাউন্ডারের জেন্টল মিডিয়াম পেসে দ্রুত রান তুলতেই হিমশিম খায় খুলনার ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ব্রেক থ্রু আসে যদিও ইমাদের হাত ধরে। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে তাকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন মুনিম শাহরিয়ার। আগের তিন ম্যাচ মিলিয়ে ২৫ রান করার পর বাদ পড়া ওপেনার একাদশে ফেরার ম্যাচে আউট হলেন ৬ বলে ৩ করে। আরেক ওপেনার অ্যান্ড্রু বালবার্নি ৪ রানে জীবন পেয়েও ৭ রানে বিদায় নেন রুবেল হোসেনকে স্কুপ খেলে। দুই ওপেনারের মাঝে আউট হয়ে যান শেই হোপও। তানজিম হাসান সাকিবের বলে কাভার দিয়ে ছক্কা মারার পরের বলেই খুলনা অধিনায়ক উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন আলগা শটে। পাওয়ার প্লেতে খুলনা তোলে ৩১ রান।

এরপর তারা যেন গুটিয়ে যায় আরও। পরের চার ওভারে রান আসে আর মোটে ১১। এই সময়ে ইমাদের জোরের ওপর করা সোজা বলে বোল্ড হয়ে যান ইয়াসির আলি চৌধুরি (১৫ বলে ১২)। খুঁড়িয়ে এগোতে থাকা খুলনার ফিফটি আসে দ্বাদশ ওভারে। তবে ওই ওভারেই রুবেলকে পুল করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন সাব্বির রহমান। একসময়ের টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান এবার তিন ম্যাচে ২২ রান তোলার পর বাদ পড়েছিলেন। ফেরার ম্যাচে করতে পারলেন ৯ বলে ৬। এই পুরো সময়টায় এক প্রান্তে পড়ে থাকেন জয়। আমিরের শর্ট বলে পুল করে ছক্কা মারেন তিনি ত্রয়োদশ ওভারে। পরে আমিরের করা অষ্টাদশ ওভারেই রান কিছুটা বাড়াতে পারে খুলনা। নাহিদুল ইসলামের দুই চার ও জয়ের ছক্কায় ওভার থেকে আসে ১৮ রান। তবে পরের দুই ওভার আর সেভাবে কাজে লাগাতে পারেনি খুলনা। ৪১ রানে জয়কে ফেরান তানজিম।

১৭ বলে ২২ করে নাহিদুল বিদায় নেন শেষ ওভারে। অল্প পুঁজি নিয়েও ম্যাচ জমিয়ে তোলার সম্ভাবনা জাগিয়েছিল খুলনা। সিলেটের দুই ওপেনার তৌহিদ হৃদয় ও নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হয়ে যান দ্রুতই। টুর্নামেন্টের রান স্কোরারের তালিকায় শীর্ষে থাকা দুই ব্যাটসম্যানই বিদায় নেন বাজে শটে। সাইফ উদ্দিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ক্রস ব্যাটে খেলে কট বিহাইন্ড হন হৃদয়। নাহিদুলের অফ স্পিনে স্লগ করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ তুলে দেন শান্ত। তবে ১০ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে ধীরে ধীরে জয়ের পথে ফেরান জাকির হাসান ও মুশফিকুর রহিম। রান রেটের চাপ ছিল না বলে শুরুতে কোনো তাড়া দেখাননি দুজন।

এক-দুই করে নিয়ে গড়ে তোলেন জুটি। পাওয়ার প্লেতে রান ওঠে ¯্রফে ৩১। পাওয়ার প্লে শেষ হতেই হাসান মুরাদের বাঁহাতি স্পিন ছক্কায় ওড়ান জাকির, আরেক বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে মারেন জোড়া ছক্কা। গতি পেয়ে যায় ইনিংস। ক্রমে সাবলীল হয়ে ওঠেন মুশফিকও। আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাদের। ৯০ রানের জুটি থামে জাকিরের বিদায়ে (৪৬ বলে ৫০)। তবে জয় তখন নাগালেই। ওই ওভারেই মুশফিক (৩৫ বলে ৩৯) বিদায় নেন নন-স্ট্রাইক প্রান্তে রান আউট হয়ে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ১১৩/৮ (মুনিম ৩, বালবার্নি ৭, হোপ ৯, জয় ৪১, ইয়াসির ১২, সাব্বির ৬, সাইফ উদ্দিন ৬, নাহিদুল ২২, নাসুম ১*, ফন মিকেরেন ১*; নাইব ৪-০-২২-০, ইমাদ ৪-০-১০-২, আমির ৪-০-৩২-১, রুবেল ৪-০-২৪-২, তানজিম ৪-০-২২-৩)
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ১৭.৩ ওভারে ১১৪/৪ (হৃদয় ৫, শান্ত ৩, জাকির ৫০, মুশফিক ৩৯, বার্ল ১২*, নাইব ২*; নাহিদুল ৪-০-২৩-১, সাইফ উদ্দিন ৩-০-১৩-১, ফন মিকেরেন ৩-০-২৪-০, নাসুম ৪-০-২৮-০, মুরাদ ৩.৩-০-২৬-১)
ফল: সিলেট স্ট্রাইকার্স ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ইমাদ ওয়াসিম