করোনার আতঙ্কে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। এই ভাইরাসের স্থায়ীত্ব, কিভাবে ছড়ায় এবং এটি ধ্বংসের উপায় নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। ভাইরাসটির গতিবিধি নিয়ে বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত বেশ কিছু ধারণাও পেয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সময় তার নাক ও মুখ দিয়ে যে জলীয় কণা বা ড্রপলেট বাতাসে বের হয়ে আসে তার মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে, আক্রান্ত ব্যক্তির মাত্র এক বারের কাশি থেকেই বের হতে পারে ৩ হাজার ড্রপলেট। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ড্রপলেটের এই কণা সহজেই আরেকজনের গায়ে, কাপড়ে এবং আশেপাশের জিনিসের উপর পড়তে পারে। আবার ড্রপলেটের কিছু ক্ষুদ্র কণা থেকে যেতে পারে বাতাসেও। গবেষণা বলছে, এই ভাইরাস মল-মূত্রের মধ্যে আরো বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে। বিশেষ করে টয়লেট থেকে ফিরে ভালো করে হাত না ধুলে আক্রান্ত ব্যক্তির হাতের স্পর্শের সাহায্যে আরো অনেক কিছুতেই এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এ- প্রিভেনশন বলছে, ভাইরাসটি লেগে আছে এরকম কোন বস্তু স্পর্শ করার পর হাত দিয়ে যদি মুখ স্পর্শ করা হয় তাহলে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। তবে এটিই এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার প্রধান উপায় নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অন্যান্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বার বার হাত ধুয়ে এই ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ ছাড়া হাত দিয়ে যেসব জিনিস ধরা হচ্ছে সেগুলো বার বার জীবাণুমুক্ত করেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়।
করোনাভাইরাসের আয়ু
বিজ্ঞানীদের মতে, নভেল করোনাভাইরাস মানুষের মাধ্যম মানুষের মধ্যে ছড়ায়। তবে এর জীবাণু এ মানবদেহের বাইরে কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে তা নিয়ে এখনও বিজ্ঞানীদের ধারণা পরিষ্কার নয়।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সার্স ও মার্সের মতো করোনাভাইরাস লোহা, কাঁচ এবং প্লাস্টিকের গায়ে নয় দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। আবার কোনো কোনো ভাইরাস ঠা-া জায়গায় ২৮ দিনও বেঁচে থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথের একজন ভাইরোলজিস্ট নিলৎজে ফান ডোরমালেন তার সহকর্মীদের নিয়ে গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, কোভ-২ বা সার্স ভাইরাস কাশি দেওয়ার পর থেকে ড্রপলেটের মধ্যে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এ ছাড়া ১ থেকে ৫ মাইক্রোমিটার আকারের ক্ষুদ্র ড্রপলেটে সার্স ভাইরাস কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, কোভ-২ ভাইরাস কার্ডবোর্ডের মতো শক্ত জিনিসের ওপর ২৪ ঘণ্টা আর প্লাস্টিকের জিনিসের গায়ে দুই থেকে তিন দিনও বেঁচে থাকতে পারে। গবেষণা বলছে, ভাইরাসটি দরজার হাতল, প্লাস্টিক, লেমিনেটেড ওয়ার্কটপ ও কঠিন বস্তুর ওপর দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে। আর কপারে চার ঘন্টা পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে।
নির্মূলের উপায়
নভেল করোনাভাইরাসের জীবাণূ ধ্বংসে কিছু উপায় খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। যেমন-
১. ৬২-৭১% এলকোহল মিশ্রিত তরল পদার্থ দিয়ে কোনো জিনিসকে এক মিনিটেই করোনামুক্ত করা যায়।
২. করোনার জীবাণু দূর করতে ব্লিচিং পাউডারও বেশ উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, দশমিক ৫ শতাংশ হাইড্রোজেন প্রিঅক্সাইড এবং দশমিক ১ শতাংশ সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট মেশানো ব্লিচ দিয়ে করোনাভাইরাস নির্মূল করা সম্ভব।
৩. গবেষণায় দেখা গেছে, সার্সের জন্য দায়ী করোনাভাইরাস ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারে না। তাই উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কারণে অন্যান্য করোনাভাইরাসের ও দ্রুত মৃত্যু হতে পারে।
কতোক্ষণ বেঁচে থাকে কোভিড-১৯ এর জীবাণু
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোভিড-১৯ এর জন্যে দায়ী ভাইরাসটি কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে তা নির্ভর করে এটি কোন ধরনের বস্তুর গায়ে পড়েছে তার ওপর। গবেষণায় দেখা গেছে, দরজার শক্ত হাতল, লিফটের বাটন এবং কিচেন ওয়ার্কটপের মতো শক্ত জিনিসের গায়ে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা টিকে থাকতে পারে ভাইরাসটি। তবে এর আগের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, সহায়ক পরিবেশে সব ধরনের করোনাভাইরাস এক সপ্তাহও বেঁচে থাকতে পারে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কাপড়ের মতো নরম জিনিসের গায়ে ভাইরাসটি দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে না। গবেষকরা বলছেন, কোভিড-১৯ এর ভাইরাসটি লেগে আছে এরকম জিনিসে শুধু স্পর্শ করলেই কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় না। বরং স্পর্শ করার পর সেই হাত দিয়ে কেউ যদি মুখ, নাক অথবা চোখ স্পর্শ করে তাহলেই ভাইরাসটি একজনের শরীরে ঢুকে পড়ে। সূত্র : বিবিসি