‘কালাইরুটি’র গতি দেখল পাকিস্তান
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে এবার গতির ঝলক দেখা গেছে। পাকিস্তানের গতিমানব শোয়েব আখতারের শহর রাওয়ালপিন্ডিতে গতির ঝড় তুলেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কালাইরুটি খেয়ে বড় হওয়া নাহিদ রানা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে ঘণ্টায় ১৫২ কিলোমিটার গতিতে বল করেছেন ২১ বছর বয়সী এ পেসার। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার নাহিদের রানার গতিতেই কাঁপল রাওয়ালপিন্ডি।
শুধ নাহিদই নয়-হাসান-নাহিদ রানা-তাসকিনরা যে বড় দলগুলোর ব্যাটারদের কাঁপন ধরিয়ে দিতে পারেন সেটার প্রমাণ আবারো রাখলেন তারা।
তবে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও গতির ঝড় তুলে আলোচনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ এক্সপ্রেস খ্যাত পেসার নাহিদ রানা। তার বলের গতিতে দেশের ক্রিকেটে গড়েছেন নতুন ইতিহাস। স্পর্শ করেছেন নতুন এক মাইলফলক।
পাকিস্তানের দ্বিতীয় টেস্টে দ্রুতগতিতে বল ছুঁড়ে রেকর্ড গড়েছেন নাহিদ রানা। প্রতি ঘণ্টায় ১৫২ কিলোমিটার গতিতে বল করেছেন তিনি। যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে ১৫০ এর কোটা ছুঁতে পারেননি কোনো বাংলাদেশী বোলার। সর্বোচ্চ ১৪৯.৫ কিলোমিটার গতিতে বল করার রেকর্ড করেছিলেন পেসার রুবেল হোসেন।
গত সোমবার রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের চতুর্থ দিনে এই রেকর্ড করেন নাহিদ রানা। এদিন বল হাতে পাকিস্তানের ৪ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। শান মাসুদ, বাবর আজম, সউদ শাকিল ও আবরার আহমেদের উইকেট তুলে নেন।
নাহিদ রানার এটি ছিল তৃতীয় টেস্ট। চলতি বছরের মার্চে সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল তার। শুরুতেই নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছিলেন তিনি। গতিতে মুগ্ধ করেছেন সবাইকে। অভিষেক ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছিলেন ২ উইকেট।
আর চলতি সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টটি ছিল তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ওই ম্যাচে তিনি নিয়েছেন ১ উইকেট। সবমিলিয়ে ৩ ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তার শিকার ১১ উইকেট।
ক্রিকেটে নাহিদ রানার উত্থানের গল্পটা আবার একটু অন্যরকম। বয়স ১৮ বছর পার হওয়ার পর প্রথম ক্রিকেট বল হাতে নেন তিনি। শরীরের গড়ন দীর্ঘকায় হওয়ায় বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন জোরে বল করার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের হরিশপুর গ্রামে তার িৈত্রক নিবাস। গ্রামটি পদ্মা নদীর পাড়ে। ওই গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান নাহিদ রানা। যার নাম এখন ক্রিকেট পাড়ায় আলোচিত।
তবে শুরুতে ক্রিকেটে সমর্থন ছিল না পরিবারের। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক দেখে পরিবার শর্ত দিয়েছিল, এসএসসি পাস করতে পারলেই খেলতে দেয়া হবে।
অবশেষে শর্ত পূরণ করে ক্রিকেট বলের অনুশীলন শুরু ১৮ বছর বয়সে। বয়সভিত্তিক ধাপে গতির ঝড় তুলে সামনে এগোতে কষ্ট হয়নি তার।
প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে রাজশাহী বিভাগের হয়ে ১৫ ম্যাচেই পান ৬৩ উইকেট। গত বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের হয়ে ঘণ্টায় ১৪৯ কিলোমিটার গতি তুলে জন্ম দেন আলোচনার। এ রকম একজন প্রতিভাকে টেস্টে নামিয়ে দেয়ার লোভ সামলাতে পারেনি বাংলাদেশ দল।
শ্রীলঙ্কার বড় জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরানোর নায়ক তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৪ ওভার বল করে ৮৭ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়েছেন ডান হাতি এই তরুণ। তবে এত দিন বাংলাদেশের ক্রিকেটে যে জিনিসটার ঘাটতি ছিল প্রকট, তা মেটানোর আভাস দিয়েছেন প্রবলভাবে।
বাংলাদেশের একজন পেসার ঘণ্টায় নিয়মিত ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল করেছেন, কখনো গতি যাচ্ছে ১৫০ কিলোমিটারের কাছে। ভক্ত, সমর্থক তো বটেই টিম ম্যানেজমেন্টের কাছেও এ যেন রোমাঞ্চকর ব্যাপার।
মাত্র ১৫টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়েই টেস্টে নামেন আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের তরুণ ক্রিকেটার নাহিদ রানা। সহজাত অনন্য দক্ষতা থাকার কারণে তাকে পেরোতে হয়নি সবগুলো ধাপ। লাফ দিয়ে ছুটেছে তার পথ চলা।
পেস বোলিং ছাড়া ক্রিকেটে যে এখনো তিনি বেশ কাঁচা, সেটা বোঝা যায় ফিল্ডিং দেখে। কখন বলের পেছনে ছুটবেন, কখন ড্রাইভ দেবেন তা নিয়ে নেই পরিষ্কার ধারণা। আগের দিন ক্যাচিং অনুশীলনে হিমশিম খেয়েছেন। নাহিদের এই দুর্বলতা জেনে দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা তাকে সামলেছেন দারুণভাবে। বলের পেছনে ছুটে তিনি কখন কোনদিকে ড্রাইভ দেবেন তা চিৎকার দিয়ে গাইড করতে হয়েছে।
বিপিএলেই গতির রাজা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন নাহিদ রানা। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েই সেই গতির পসরা সাজিয়েছিলেন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। প্রথম ইনিংসে তিনি নিয়েছিলেন তিন উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসেও আগুনে বোলিং অব্যাহত রেখেছেন। শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে প্রথম বল করতে এসে চতুর্থ বলে তেমনই এক ডেলিভারিতে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে উইকেটের পেছনে লিটন দাসকে ক্যাচ দেন লঙ্কান ওপেনার নিশান মাধুশঙ্কা। এরপর তার শিকার কুশল মেন্ডিস। ক্যাচ নিয়েছেন দিমুথ করুণারত্নেরও। তথ্যসূত্র : বিভিন্ন গণমাধ্যম।