মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০ রজব, ১৪৪৬ হিজরি

Last Updated on ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪ by

কড়া নিরাপত্তায় সচিবালয় নিয়ন্ত্রিত প্রবেশাধিকার

সাত নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। উপদেষ্টা, সচিব ও সংস্থা প্রধান ছাড়া অন্য কারো গাড়ি সচিবালয় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। স্থায়ী পরিচয়পত্র দেখিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশের পর অফিস করছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
গত বুধবার দিবাগত রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর রবিবার প্রথম কর্ম দিবসে খুলেছে সচিবালয়। এরপর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রবেশে পরিচয়পত্র নিশ্চিত ব্যবস্থা আরোপ করা হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব থেকে নিচের দিকের কর্মকর্তারা প্রবেশ পথে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছেন।
জরুরি দর্শনার্থীদের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আব্দুল গনি রোডে পৃথক বুথ চালু করা হয়েছে। এক নম্বর গেট দিয়ে ঊর্ধ্বতনরা গাড়ি নিয়ে ঢুকছেন। দুই নম্বর ও পাঁচ নম্বর গেট দিয়ে বাকিরা পায়ে হেঁটে প্রবেশ করছেন।
এক নম্বর গেটে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা হাসান তারেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপদেষ্টা, সচিব, সংস্থা প্রদান ও অগ্নিকা-ের তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কোনো কর্মকর্তাকে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।’
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম রবিবার বলেছেন, আগামীকাল (আজ) সোমবার থেকে সাংবাদিকরা অস্থায়ী পাস নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।
সচিবালয়ে প্রবেশে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য আবেদন গ্রহণের লক্ষে একটি ‘বিশেষ সেল’ গঠন করেছে সরকার। সেল গঠন করে গত শনিবার অফিস আদেশ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। উপসচিব মো. আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রশাসন-১ শাখা থেকে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য অস্থায়ী প্রবেশ পাসের আবেদন গ্রহণ করার নিমিত্ত ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার, ডিএমপি, ১৫ আব্দুল গনি রোড, ঢাকায় ‘অস্থায়ী প্রবেশ পাস সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ গঠন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের দুই কর্মকর্তা/কর্মচারীকে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেই সেলে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশক্রমে সংযুক্ত করা হয়েছে। সংযুক্ত দুই কর্মকর্তা/কর্মচারী হলেনÑ সিনিয়র সহকারী সচিব (প্রশাসন-৩ শাখায় সংযুক্ত) এফ এম তৌহিদুল আলম ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক (সচিবালয় নিরাপত্তা শাখা) মৃত্যুঞ্জয় বাড়ৈ।’
বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকা-ের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সাত সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসন ও শৃঙ্খলা শাখার এক অফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
অফিস আদেশে বলা হয়, কমিটি প্রয়োজনে এক বা একাধিক সদস্য যুক্ত (কো-অপ্ট) করতে পারবে। কমিটি আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ খালেদ রহীম। তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন)। সদস্য সচিব গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়)। কমিটির সদস্যÑ জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিনিধি (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়), স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিনিধি (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের প্রতিনিধি।
কমিটির কার্যপরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, অগ্নিকা-ের উৎস ও কারণ উদ্ঘাটন, অগ্নিদুর্ঘটনার পেছনে কারো ব্যক্তিগত বা পেশাগত দায়-দায়িত্ব আছে কিনা, তা উদ্ঘাটন এবং এ-জাতীয় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ করা।
ফায়ার সার্ভিস অফিস জানায়, তারা আগুন লাগার খবর পায় বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে। দিবাগত রাত ১টা ৫৪ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট কাজ করে। পরে ইউনিটের সংখ্যা বাড়ানো হয়। সবশেষ ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিল। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আর দুপুর পৌনে ১২টায় আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
বুধবার দিবাগত রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলায় ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে এবং ভবনটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ রয়েছে। খবর বাসস।

About The Author

শেয়ার করুন