এস আলমের ৭ ব্যাংকে বিশেষ সুবিধা বন্ধ
আলোচিত শিল্পগ্রুপ এস আলমের প্রভাবে সাতটি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলতি হিসাব ঋণাত্মক রেখেই বিনা বাধায় লেনদেন করছিল। ‘বিশেষ আনুকূল্যে’ লেনদেনের এই সুযোগ বন্ধ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতদিন এসব ব্যাংকের চেক অন্য ব্যাংকে জমা দিয়ে যে কোনো পরিমাণের টাকা উত্তোলন করা যেত। সদ্য বিদায়ী গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের বিশেষ আনুকুল্যে ব্যাংকগুলো এই সুবিধা পেত বলে ভাষ্য সংশ্লিষ্টদের। তবে বুধবার থেকে ১ কোটি টাকার বেশি চেক নগদায়ন করতে পারছে না।
নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের যোগদানের আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন নির্দেশনা দিল। গত মঙ্গলবার এক নির্দেশনায় এস আলমের সব ব্যাংকে এই বিশেষ সুবিধা বন্ধ করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ব্যাংকগুলোকে এই বিশেষ উপায়ে লেনদেন বন্ধের হুঁশিয়ারি করে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি হিসাবে ঘাটতি মেটাতে না পারলে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগ থেকে সব ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশনার মাধ্যমে জানানো হয়, বুধবার থেকে ৭টি ব্যাংকের ১ কোটি টাকার বেশি অঙ্কের চেক নগদায়ন করা যাবে না। ব্যাংকগুলো হলোÑ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক।
সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ মে পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর সিআরআরসহ চলতি হিসাবে ঋণাত্মক হয়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। এছাড়া সমস্যাগ্রস্ত পদ্মা ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অবশ্য ব্যাংক দুটির চলতি হিসাবে কোনো ঘাটতি নেই। তবে ব্যাংক দুটি সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণ করতে পারে না।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি একটি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সদ্য বিদায়ী গভর্নরের বিশেষ ক্ষমতাবলে এস আলম গ্রুপের কর্তৃত্বে থাকা সাতটি ব্যাংক ডিমান্ড প্রমিসরি (ডিপি) নোটের বিপরীতে এ সুযোগ পেয়ে আসছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছেপে এই ব্যাংকগুলোকে হেল্প করত। এখন হঠাৎ করে বন্ধের ফলে এসব ব্যাংক নতুন করে কোনো ঋণ দিতে পারবে না। অবশ্য আদায়ের বিপরীতে আমানতকারীর অর্থ ছাড়ে সমস্যা হবে না।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ। ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ঘাটতি রয়েছে ১০ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। এছাড়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ঘাটতি ৭ হাজার ১২৮ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৪ হাজার ৪৮১ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকে ৩ হাজার ৪৭৯ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ২ হাজার ৭৯৪ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৭১২ কোটি এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি ৩৯২ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় দুই বছর ধরে এই ব্যাংকগুলো বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণ করতে পারছে না। ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা সব উপকরণ বন্ধক রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে ফেলেছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য ব্যাংক থেকে ধারদেনা করার কোনো উপকরণ এসব ব্যাংকের হাতে নেই। আবার সিআরআর ও এসএলআর ঘাটতি হলে যে জরিমানা দিতে হয়, তাও পরিশোধের সুযোগ নেই। ঋণ বিতরণ বন্ধের নির্দেশ না দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে চলতি হিসাবে ঋণাত্মক রেখে লেনদেনের সুযোগ দিয়ে আসছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। খবর এফএনএস।