বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৮ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

Last Updated on ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫ by

এবার হোঁচট খেলে দেশের মানুষ আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না : উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, দেশের মানুষ বারবার আশাহত হয়েছে। তারা যেন আর আশাহত না হয়। কারণ এবার তারা হোঁচট খেলে আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার এবং রাষ্ট্রের সংস্কার কাজ এগিয়ে চলছে। আর আমরা যে সময় পাবো তার মধ্যে যেন এই কাজগুলোকে এগিয়ে নিতে পারি।
মাহফুজ আলম মঙ্গলবার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ (পিআইবি) মিলনায়তনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উপলক্ষে প্রামাণ্য চিত্র ও চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মাহবুবা ফারজানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও শহীদ শাকিলের মা বিবি আয়েশা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন।
মাহফুজ আলম বলেন, ‘এক দল, এক দেশ, এক নেতা, এক রাষ্ট্রÑ এই নীতি ধরে শেখ হাসিনা তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে গিয়ে যে ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি তা দূর করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘তিনি তার পিতার প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছেন। ১৯৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের মতো তিনিও একই পথ বেছে নিয়েছিলেন। শেখ মুজিব মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছেন। দেশের এক দশকের ইতিহাস মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার ইতিহাস। শেখ মুজিবের আমলে গুম, হত্যা ও নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।’
মাহফুজ বলেন, ‘শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনী ও বিজিবিকে রক্ষীবাহিনীতে পরিণত করেছিলেন। পিলখানা হত্যাকা-ের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর নৈতিক মনোবল ভেঙে দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সেনাবাহিনীকে কনটামিনেটেড (দূষিত) করে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি জুলাই থেকে আগস্টে তার প্রমাণ রেখে গেছেন। আর এজন্যই তাকে বাকশাল গঠন করতে হয়নি। প্রশাসনকেই তিনি বাকশাল হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘তার (শেখ হাসিনা) পরিকল্পনা ছিল মুজিব আদর্শের ট্যাবলেট (গুলি) খাইয়ে কয়েক প্রজন্মকে পঙ্গু করে রাখা। রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে শেখ হাসিনা আদর্শিক গু-াদের পুষত। সেখানে সাংবাদিকরাও ছিল। তারা হত্যাকা-ের সময় পরিবেশ স্বাভাবিক করতে মৌলবাদবিরোধী তকমা লাগিয়ে তা বৈধ করেছে। পুরো ব্যবস্থা এমনভাবে গড়েছেন যেখানেই হাত দেওয়া হয়, সেখানেই গু-াদের পাওয়া যায়।’
উপদেষ্টা আরো বলেন, ফ্যাসিবাদে অবশ্যই দেশের মানুষের বড় অংশের অংশগ্রহণ থাকে। আর এই ফ্যাসিবাদে গু-াদের পাশাপাশি প্রশাসনও ছিল।
তিনি আরো বলেন, ‘ব্যক্তি এবং কাঠামো থেকে ফ্যাসিবাদ দূর করতে হবে। শহীদ এবং আহতদের প্রত্যাশা থেকে নতুন বন্দোবস্তের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট হত্যাকা-ের বিচার ও প্রতিষ্ঠানের সংস্কার প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। আর এজন্য সমাজের মধ্যে বোধের জন্ম দিতে হবে। শহীদ আবু সাঈদের বোধ সকল মানুষের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। তার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। মানুষের স্মৃতিতে সবসময় তা জাগ্রত রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ডিজিটালি অ্যাকসেসেবিলিটি থাকায় তরুণরা লাইভ বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে এই শতাব্দীর ফ্যাসিস্টকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তরুণদের রাগ, বিক্ষুব্ধতাকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়ে ফ্যাসিবাদের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হবে। বিশ্বের তরুণদের জন্য আমাদের তরুণরা অনুকরণীয় হয়ে উঠবে।
দেশের তরুণরাই গণতান্ত্রিক মানসিকতা এবং সকলের জন্য আগামীর রাষ্ট্র গড়ার নেতৃত্ব দেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ উপদেষ্টা।
পরে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম অন্য অতিথিদের সাথে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্রের উদ্বোধন করেন।

About The Author

শেয়ার করুন