Last Updated on ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪ by
এবার প্রাণীদের ভাষা অনুবাদ করবে এআই
প্রাণীদের ভাষা মানুষ বুঝতে পারবে, ভেবে দেখুনতো এমনটা হলে কেমন হবে? হ্যা ঠিক এমনি একটি অসম্ভব প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে বিজ্ঞানীরা। ২০২৫ সালের মধ্যে এআই এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে প্রাণীদের ভাষা মানুষের ভাষায় অনুবাদ করার প্রকল্পটি সম্পন্ন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই গবেষণার অন্যতম অনুপ্রেরণা হচ্ছে কলার-ডলিটল পুরস্কার, যা বিজ্ঞানীদের জন্য অর্ধ-মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে, যারা প্রাণীদের ভাষার কোড তৈরি করতে সক্ষম হবেন তারাই এই পুরস্কারটি পাবেন। প্রাণীদের ভাষার অর্থ বোঝার জন্য বহু গবেষণা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। যেমন, প্রজেক্ট সেটি (সিইটিআই) তিমিদের শব্দ ও যোগাযোগের ধরণ বিশ্লেষণ করছে। কিন্তু প্রাণীদের ভাষা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ডেটার অভাব। মানুষের ভাষা বিশ্লেষণের জন্য যেমন ইন্টারনেটে বিশাল পরিমাণ তথ্য পাওয়া যায়, প্রাণীদের ক্ষেত্রে সেরকম ডেটা খুবই সীমিত। উদাহরণস্বরূপ, জিপিটি-৩ তৈরি করতে ৫০০ গিগাবাইট টেক্সট ব্যবহার করা হয়েছে, অথচ প্রজেক্ট সেটির জন্য তিমিদের মাত্র ৮,০০০ কোডা বা শব্দ পাওয়া গেছে। মানুষের ভাষার ক্ষেত্রে আমাদের জানা থাকে শব্দের অর্থ এবং গঠন, যা প্রাণীদের ভাষায় নেই। উদাহরণস্বরূপ, একটি নেকড়ের ডাক আরেকটি নেকড়ের ডাকে কী ভিন্নতা রয়েছে, সেটি বোঝা কঠিন। তবুও, এআই প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে বিজ্ঞানীরা এখন প্রাণীদের ভাষার বিশাল ডেটাসেট সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করতে পারছেন। প্রাণীদের ভাষা বিশ্লেষণে স্বল্পমূল্যের রেকর্ডিং ডিভাইস যেমন অডিওমথ (অডিওমথ) ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই ডিভাইসগুলো জঙ্গলে গিবনের ডাক বা বনভূমির পাখিদের গান ২৪ ঘণ্টা ধরে রেকর্ড করতে সক্ষম। এর ফলে গবেষণাগারে আগে যা করা সম্ভব ছিল না, এখন সেটি সহজেই করা যাচ্ছে। যখন এই ডেটাসেটগুলো সংগ্রহ করা হয়, তখন কনভোলিউশনাল নিউরাল নেটওয়ার্কের মতো অ্যালগরিদম হাজার হাজার ঘণ্টার রেকর্ডিং থেকে প্রাণীদের শব্দ শনাক্ত করতে পারে। এআই ক্লাস্টারিং টুলস শব্দগুলোকে তাদের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করতে পারে। এই বিশাল ডেটাসেট পাওয়ার ফলে বিজ্ঞানীরা ডিপ নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে প্রাণীদের শব্দের গোপন গঠন খুঁজে বের করার সুযোগ পাচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিমিদের শব্দের ধারাবাহিকতা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা তাদের শব্দের মাঝে কোনও গঠনমূলক অর্থ আছে কি না, তা বের করতে পারবেন। প্রাণীদের ভাষা বিশ্লেষণের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, আমরা তাদের শব্দগুলো দিয়ে কী করতে চাই? কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন ইন্টারস্পিসিজ.আইও, স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে প্রাণীদের ভাষাকে মানুষের ভাষায় অনুবাদ করার। কিন্তু বেশিরভাগ বিজ্ঞানী মনে করেন যে প্রাণীদের ভাষা হয়তো মানুষের মতো গঠিত ভাষা নয়। কলার-ডলিটল পুরস্কার একটি উন্নত লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, প্রাণীদের ভাষা বোঝা অথবা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা। এটি বোঝায় যে আমরা প্রাণীদের শব্দ বিশ্লেষণ করে তাদের মধ্যে তথ্য প্রবাহের মাত্রা বুঝতে চাই। তবে প্রাণীদের ভাষায় তথ্যের গভীরতা কতটা, সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। ২০২৫ সালে প্রাণীদের ভাষা বিশ্লেষণে আমরা উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখতে পাব। উন্নত প্রযুক্তি এবং বিশাল ডেটাসেট ব্যবহার করে আমরা প্রাণীদের শব্দের অর্থ, তাদের মধ্যে তথ্য প্রবাহ, এবং তারা কী বলতে চায় তা বোঝার দিকে এগিয়ে যাব। তবে, প্রাণীদের ভাষা বুঝতে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে অতিক্রম করা সহজ নয়। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, প্রাণীদের সঙ্গে এমন একটি সম্পর্ক তৈরি করা যা আমাদের পারস্পরিক বোঝাপড়াকে গভীরতর করবে। প্রাণীদের শব্দের বিশ্লেষণ আমাদের পরিবেশ রক্ষা, প্রাণী সংরক্ষণ, এবং তাদের জীবনধারার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।