শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

Last Updated on জুন ২২, ২০২৫ by

এনবিআর সংস্কার না হলে রাজস্ব ঘাটতি চলতেই থাকবে : সিপিডি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার না হলে রাজস্ব ঘাটতি চলতেই থাকবে বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্কার না হওয়ায় প্রতিবছর এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না বলেও মত গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির।
আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আয়োজিত ডায়ালগে এই মতামত দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
রবিবার সকালে রাজধানীর গুলশানে এক হোটেলে এই ডায়ালগ আয়োজন করে সিপিডি।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না। কেন সেটা পারে না? কারণ সেখানে কোনো কাঠামোগত বা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এখনো হয়নি। সংস্কার ছাড়া এ ধরনের কাঠামো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে রেখে দিলে এমন ঘাটতি চলতেই থাকবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এতে উপস্থিত ছিলেন— সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, বিজিএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইনামুল হক খান, ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা, শ্রমিক নেতা রাজেকুজ্জামান রতনসহ আরো অনেকে।
মূল প্রবন্ধে ফাহমিদা খাতুন বলেন, অর্থনৈতিক সমস্যা ও সংকটের সময় অন্তর্বর্তী সরকার বাজেটটি দিয়েছে। গত ৩ বছর ধরে অর্থনীতি সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে। অর্থনীতির মূল সূচকগুলো নিম্নমুখী। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা দুর্বল অবস্থায় ছিল। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ, ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতা— সবকিছু মিলিয়ে এই বাজেট প্রণীত হয়েছে। সেজন্য এই বাজেটের অগ্রাধিকার ঠিক করাটা চ্যালেঞ্জের। তবে মূল চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পুনরুদ্ধার করা।
তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর যেসব প্রক্ষেপণ দেওয়া হয়েছে সেগুলো উচ্চাকাঙ্ক্ষী মনে হয়েছে। অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক নিম্নমুখী। এর মধ্যে রপ্তানি, রিজার্ভ, রেমিটেন্স— এইগুলো ভালোর দিকে আছে। টাকার সঙ্গে ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে একেবারে স্থবিরতা রয়েছে। রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না।
উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রক্ষেপণ প্রসঙ্গে ফাহমিদা খাতুন বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২০২৬ এর জন্য সাড়ে ৫ শতাংশ বলা হচ্ছে। ২০২৫ এর রিভাইজড বাজেটে এটা ছিল ৫ শতাংশ। অন্যদিকে বিবিএস বলেছে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। ৪ শতাংশ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ করতে গেলে বেশ কিছুটা উল্লম্ফন দরকার। এই প্রবৃদ্ধির জন্য দরকার বিনিয়োগ।
বিনিয়োগ কোথা থেকে আসবে এমন প্রশ্ন করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, মূল বিনিয়োগ সরকারি বিনিয়োগ হয়ে আসছে। কারণ ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ আসছে না। সরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপির অনুপাত সামান্য কম দেখানো হয়েছে। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ও জিডিপির অনুপাত দেখানো হয়েছে— এখানে যা ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ হবে। এই প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে অতিরিক্ত ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা লাগবে। সাধারণ সময়ের তুলনায় যা ১২ শতাংশ বেশি। অর্থনৈতিক সংকটের এসময় ব্যক্তি খাতের প্রবৃদ্ধি হঠাৎ এত বেড়ে যাবে কীভাবে সেটা বোধগম্য না। তিনি আরো বলেন, মূল্যস্ফীতির প্রবণতা কিছুটা কমেছে। ২০২৬ এ সাড়ে ৬ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ২০২৫ সালের মে মাসে ১০ শতাংশের উপরে। সেখান থেকে সাড়ে ৬ শতাংশে আনতে হলে বেশ খানিকটা জোর দিতে হবে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেট অন্তর্বর্তী সরকার প্রণয়ন করবে কিনা আমরা জানি না। কিংবা নতুন সরকার করবে। তারপরও যেসব অসামঞ্জস্যতা, ঘাটতি পাচ্ছি— বাজেটের একটা মধ্যবর্তী রিভিউ হওয়া প্রয়োজন। সেটা অ্যাসেসমেন্ট করে জনসম্মুখে প্রকাশ করা প্রয়োজন। বাজেটের মধ্যবর্তী একটা সংশোধন, অ্যাসেমেন্ট ও রিভিউ দরকার। তারপর কাঠামোর মধ্যে থেকে পরিমার্জন করা প্রয়োজন, যাতে এর মধ্যে স্বচ্ছতা থাকে। বাজেট বাস্তবায়নে প্রতিবছর ঘাটতি থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, এর ফলে বাজেটের উদ্দেশ্য পরিপালন হয় না। বাজেট বাস্তবায়নে নজর দেওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্যে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবার বাজেট ঘোষণার পর যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়নি। যে কারণে জনগণ ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মতামত নীতি-নির্ধারকদের কাছে পৌঁছানো যায়নি।

About The Author

শেয়ার করুন