ইউনিয়ন পর্যন্ত নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহে কাজ করছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী

8

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার জেলা ও উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জেলা ও উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষের কাছে নিরাপদ খাবার পানি পৌঁছে দেয়া। তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে কেবল ঢাকা নয়, বিভাগীয় শহরগুলোতেও নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ করছি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওয়াসার তিনটি পানি শোধনাগার উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রকল্পগুলো হলো, মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের জশলদিয়ায় পদ্মা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ফেজ-১), ঢাকার সাভারের তেঁতুলঝরায় ওয়েল ফিল্ড কনস্ট্রাকশন প্রজেক্ট (ফেজ-১) এবং নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গান্ধাপুর ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট।
প্রথম ২টি প্রকল্পের যথাক্রমে ৪৫ কোটি ও ১৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ এবং শেষের প্রকল্পটির ৫০ কোটি লিটার পানি শোধনের সক্ষমতা রয়েছে।
এলজিআরডিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, স্থানীয় সরবরাহ বিভাগের সচিব হেলাল উদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি-জিমিং, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত হু কাং-ইল, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ ও ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
এতে রাজধানীর ক্রমবর্ধমান পানি চাহিদা মেটাতে এই ৩ প্রকল্প এবং বিগত ১০ বছরে ঢাকা ওয়াসার গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প ভিডিও উপস্থাপনার মাধ্যমে দেখানো হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবার জন্য নিরাপদ পানি’ সরকারের এই শ্লোগানকে ধারণ করে ঢাকা ওয়াসা রাজধানীর বস্তিগুলোতে আইনসম্মত ও নিরাপদ পানি সংযোগের প্রক্রিয়া এরই মধ্যে নিশ্চিত করেছে। পর্যায়ক্রমে সব বস্তি পানি সরবরাহের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে সব বিভাগীয় শহরে ভূ-উপরিস্থ পানির উৎসের মাধ্যমে নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা না কমালে আমাদেরকে গুরুতর পরিণতির মোকাবেলা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থার জন্য শিল্পাঞ্চল ও আবাসিক এলাকায় জলাধার নির্মাণ এবং বর্জ্য ও দূষিত পানি নিষ্কাশনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সেচ কাজে বৃষ্টি ও ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে ৪ হাজার ৭০০ জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ সব নদীর নাব্যতা বজায় রাখা ও তা জলাধার হিসেবে ব্যবহার করতে নদী খননের কাজ চলছে। তিনি বলেন, ৭ হাজার পুকুর লবণাক্ততামুক্ত হয়েছে। এছাড়া লবণাক্ত অঞ্চলে ৩২ হাজার ৬০০ গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, মানুষের নগরমুখী প্রবণতা বন্ধ করতে গ্রামের জনগণের কাছে নাগরিক সকল সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিতে তার সরকার কাজ করছে।
সবার জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি নিশ্চিত করতে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানি সরবরাহ, স্যুয়ারেজ এবং ড্রেনেজ সিস্টেম নিয়ে আমাদের সরকার তিনটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে পাশাপাশি ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অ্যাক্ট, ন্যাশনাল ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন অ্যাক্ট ২০১৪ পাস এবং ১৯৯৯ সালে জাতীয় পানি নীতি এবং ন্যাশনাল পলিসি ফর আর্সেনিক মিটিগেশন অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন প্ল্যান গ্রহণ করা হয়। এমডিজি’র সফল বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের ঘোষিত এসডিজি-২০৩০ এর ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ৬ নম্বর হচ্ছে সবার জন্য স্যানিটেশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও পর্যাপ্ত সুযোগ নিশ্চিত করা। আমরা সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসডিজি সমন্বিত করেছি এবং এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে কিছুই না করার তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি, আমরা ঢাকা মহানগরীকে ‘পানি সংকটের’ মধ্যে পাই এবং এই সংকট কাটাতে আমরা সায়েদাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট নির্মাণ করি। পুনরায় ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরে একই পরিস্থিতি পাই এবং আমরা তখন সায়েদাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ২ ও ৩ নির্মাণ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ২০৪১ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছি।