শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৭ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

Last Updated on মে ৪, ২০২৫ by

আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন : প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, বিচার বিভাগের পূর্ণ প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি আলাদা বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন হয়েছে, যা সংস্কার অগ্রগতির মূল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করবে।
রবিবার প্রধান বিচারপতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অডিটোরিয়ামে এ.কে. খান ফাউন্ডেশন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘৭ম এ.কে. খান মেমোরিয়াল ল’ লেকচার-২০২৫’-এ ‘রিমেইনিং দ্য ফিউচার অব জাস্টিস’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেনÑ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়া আখতার। সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এম জাফরুল্লাহ্ তালুকদার। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, আইনজ্ঞ, আইনজীবী, অন্যান্য পেশাজীবীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তার ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কার রোডম্যাপ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন এবং পদ্ধতিগত দক্ষতাÑ এই তিনটি লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এরই অংশ হিসেবে নির্বাহী বিভাগ এবং আইনসভার হস্তক্ষেপ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা দুটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উচ্চ আদালতের বিচারকদের নিয়োগ এবং অপসারণের একমাত্র ক্ষমতা রাখে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সারাদেশে বিচারকদের বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা এবং সামঞ্জস্য নিশ্চিত করতে একটি বিস্তৃত বদলি ও পদায়নে নীতিমালা সরকারের কাছে এরই মধ্যে পেশ করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি এর আগে তার গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, গৃহীত উদ্যোগগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো পদক্ষেপ নয়, বরং একটি বৃহত্তর সাংবিধানিক নবজাগরণের অংশ, যা বিচার বিভাগের মর্যাদা ও স্বায়ত্তশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা একটি অপরিহার্য বিষয় এবং যদি বিচার বিভাগের স্বাধীন না হয়, কোনো সেক্টরের সংস্কার কার্যক্রমই স্থায়িত্ব পাবে না। বিচার বিভাগে সংস্কারের ওপর ভিত্তি করে আরো বৃহত্তর সংস্কারের কাঠামো নির্মিত হতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমান সাংবিধানিক বাস্তবতায় বাংলাদেশে বিচার বিভাগই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কার্যকর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
প্রধান বিচারপতি বলেন, উন্নয়ন সহযোগীগণ যেমনÑ ইউএনডিপি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সুইডেন গত ডিসেম্বর থেকে আমাদের সঙ্গে রয়েছেন এবং তাদের নীতিগত সমর্থন দিয়ে বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ বাস্তবায়নে পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি আধুনিক জীবন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে এবং বিচার ব্যবস্থা এ পরিবর্তনের প্রভাব থেকে মুক্ত নয়।
ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ডিজিটাল জগৎ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন করতে গিয়ে অনেক সময়ই মৌলিক অধিকার, বিশেষত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের শঙ্কা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে, এমন একটি পরিশীলিত ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা তৈরি করা যা একদিকে ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষা করবে, অন্যদিকে সাইবার অপরাধ, হয়রানি এবং গোপনীয়তার লঙ্ঘন প্রতিরোধ করবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে প্রযুক্তিনির্ভর নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সক্ষমতার ওপর। তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ক্রমবিকাশ বিচারপ্রক্রিয়ায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে, যার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব। তিনি বলেন, প্রযুক্তিগত এই পরিবর্তনগুলোকে কেবল বাধা হিসেবে দেখলে চলবে না, সেগুলোকে উদ্ভাবনের অনুঘটক হিসেবেও বিবেচনা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ফরেনসিক বিজ্ঞানে ন্যানো প্রযুক্তির কৌশলগত প্রয়োগ অপরাধ তদন্তে অভাবনীয় সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে।

About The Author

শেয়ার করুন