Last Updated on সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪ by
আমরা সুস্থ-সবল জাতি হিসেবে দাঁড়াতে চাই : ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টা
ছাত্র-জনতার স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে যা প্রয়োজন, তাই করা হবে জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আর পচন নয়, আমরা সুস্থ-সবল জাতি হিসেবে দাঁড়াতে চাই।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘ন্যাশনাল বিজনেস ডায়ালগ’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, মূল লক্ষ্য, যে কটা দিন আছি, আমরা একসঙ্গে কাজ করব। এ নতুন বাংলাদেশের জন্য যা প্রয়োজন তাই করব। যেন বলে যেতে পারি, আমাদের একটা সুযোগ দিয়েছিল, আমরা সেই সুযোগ পূর্ণ ব্যবহার করেছি, আমরা অতীতের পচা বাংলাদেশ থেকে নতুন তরতাজা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছি। তিনি বলেন, আর পচন নয়, আমরা সুস্থ জাতি হিসেবে, সবল জাতি হিসেবে দাঁড়াতে চাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা যদি মন ঠিক করেন, খুব দ্রুত নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। চলুন একসঙ্গে আমরা কাজ করি।
ড. ইউনূস বলেন, ছাত্র-জনতার লক্ষ্য ছিল, একটি নতুন বাংলাদেশ হবে। তাদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা একটি নতুন সুযোগ পেলাম। এ সুযোগ না এলে আমাদের যে পচন ধরেছিল, সে পচন থেকে আমাদের মুক্তির কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না, হঠাৎ করে সব বাধা আমাদের কাছ থেকে চলে গেল।
নতুন বাংলাদেশ গড়তে গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ দেওয়া শত শত ছাত্র-জনতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ যারা সামনে বসে আছেন, তারা বিশ্বমাপের উদ্যোক্তা। যে যুবক যে প্রাণ দিয়েছে, তার কাছে কী শপথ নেবেন এ বিশ্বমাপের উদ্যোক্তারা? ড. ইউনূস বলেন, যে স্বপ্নের পেছনে গিয়ে তুমি প্রাণ দিয়েছ, যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার, সে নতুন বাংলাদেশ গড়বই। এই হবে আমাদের শপথ। এ সুযোগ জাতির জীবনে বারবার আসে না।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, চিন্তা করে দেখুন, কী এক সুযোগ। সবকিছু থেকে আপনি মুক্ত। অতীত আপনাকে আর টানবে না। আপনি নতুনভাবে জন্মগ্রহণ করেছেন, নতুনভাবে অগ্রসর হবেন। নতুন করে যে স্বপ্ন তারা আমাদের মনে জাগিয়ে দিয়েছে, তা যদি আপনার মনে রেখাপাত করে, তাহলে সে স্বপ্ন পূরণে আপনিও শরিক হবেন। এ সুযোগ আর কখনো আসবে, কিনা জানি না। এ সুযোগকে আমরা যেন হারিয়ে না ফেলি। এ সুযোগ হারিয়ে ফেললে জাতির কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, আজ আমরা একযোগে এ স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে চাইÑ সরকার এবং সরকারের বাইরে যারা, সবাই একজোট, এক টিম। এটি একটি কমপ্যাক্ট টিম। আপনারা সেই টিমের সদস্য। যেটুকু সময় আমরা এ দায়িত্বে আছি, আমরা টিম হিসেবে কাজ করতে চাই।
তৈরি পোশাক শিল্পকে বিশ্বের এক নম্বরে নিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজকে যে দুই নম্বরে আছি, কী করে আমরা এক নম্বর হবো? আমাদের মেয়াদকালে যদি আপনারা এক নম্বরে নিয়ে যেতে পারেন, আমরাও স্মরণ করব, যাক বাবা, একটা কিছু করেছি তো। সবকিছু আমরা জানি না, আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু একযোগে কাজ করলে অভিজ্ঞতা এসে যাবে। সবার যে অভিজ্ঞতা, সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা কাজ করব।
ইউরোপ-আমেরিকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা আজ ধরনা দিই ব্যবসায়ীদের কাছে, যারা ইউরোপে আছেন, আমেরিকায় আছেন। তারাও কৌতূহল নিয়ে দেখছেন আমাদের এখানে কী হচ্ছে। তাদের আমরা ডেকে আনতে পারি এখানে আসুন, আপনারাও শরিক হোন এর মধ্যে। আমাদের সুযোগ দিন, আমরা যে পরিধিতে আছি, সেখান থেকে আরো উপরে চলে যেতে পারি। তিনি বলেন, কথা হলো, আমরা নিম্নআয়ের দেশ থেকে মধ্যআয়ের দেশে গেলে আমাদের সুযোগ-সুবিধা হারিয়ে ফেলব। সেই প্রতিযোগিতায় শক্ত প্রতিযোগী হওয়ার জন্য আমরা সামর্থ্য অর্জন করতে চাই। আমরা পেছনে থাকতে চাই না। সেজন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ, তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমি একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দিয়েছি, লুৎফে সিদ্দিকীকে।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসিবি) বাংলাদেশ এবং ১৫টি জাতীয় বাণিজ্য সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সংলাপে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, এফআইসিসিআই, বিএবি, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের মতো সংগঠনের নেতা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এতে সম্প্রতি বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের কারণে দেশের অর্থনীতিতে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার চিত্র তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।
আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে তার পক্ষে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর নাসির হোসেন।