শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৩ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

Last Updated on ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫ by

আমরা এখন বেশি শক্তিশালী উদ্যমী ও সৃজনশীল

একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা

অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে আমরা এখন বেশি শক্তিশালী, উদ্যমী ও সৃজনশীল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন অতীতের যে কোনো প্রজন্মের স্বপ্নের চেয়ে দুঃসাহসী। তারা যেমন নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে চায়, তেমনি একই আত্মবিশ্বাসে নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করতে চায়। নতুন পৃথিবী সৃষ্টিতে তারা নেতৃত্ব দিতে চায়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে একুশে পদকে ভূষিত বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে ‘একুশে পদক ২০২৫’ তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ১৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে একুশে পদক-২০২৫ দেয়া হয়।
নেতৃত্ব দেবার জন্য তরুণরা প্রস্তুত উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ছেলেরাও প্রস্তুত, মেয়েরাও প্রস্তুত। তারা ঘুনে ধরা, আত্মবিনাশী সভ্যতার বন্ধনমুক্ত হয়ে তাদের স্বপ্নের নতুন সভ্যতা গড়তে চায়। যে সভ্যতার মূল লক্ষ্য থাকবে পৃথিবীর সকল সম্পদের ওপর প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা, প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন দেখার এবং সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের সকল সুযোগ নিশ্চিত করা। মানুষের জীবনযাত্রাকে এমনভাবে গড়ে তোলা যাতে করে পৃথিবীর অস্তিত্ব কোনোরকম বিঘিœত না হয়। পৃথিবীতে বসবাসরত সকল প্রাণীর সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকাও কোনোক্রমেই বিঘিœত না হয়।’
তিনি মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৫ উদ্যাপনের স্মরণীয় দিনে তরুণদের এই স্বপ্নের আশু বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক এই প্রত্যাশা করেন।
দেশমাতৃকার জন্য বিভিন্ন লড়াই-সংগ্রাম, বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে যে সকল সাহসী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন তাদের সকলকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবারের অমর একুশে নতুন তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। আমরা জানি, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের আত্মপরিচয়ের অবিনাশী স্মারক। আমাদের স্বাধিকার চেতনার প্রাণপ্রবাহ একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এই ফেব্রুয়ারি মাসেই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পাকিস্তানি শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছিল ছাত্রসমাজ। ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমাদের স্বাধিকার চেতনার এক অবিশ্বাস্য জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি এক নতুন বাংলাদেশ। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে সুযোগ এসেছে নতুন এক বাংলাদেশ নির্মাণের।
একুশে পদকে ভূষিত দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের অভিনন্দন জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আপনাদের অবদানের জন্য জাতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। আপনারা জাতির পথপ্রদর্শক। আপনাদের অবদানে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতি দৃঢ় বিশ্বাসে জাতিপুঞ্জের মজলিসে ক্রমাগতভাবে উন্নততর অবস্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যন্যের মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. মফিদুর রহমান বক্তব্য দেন।
এ বছর একুশে পদক পেলেনÑ চলচ্চিত্রে আজিজুর রহমান (মরণোত্তর), সংগীতে ওস্তাদ নীরদ বরণ বড়–য়া (মরণোত্তর) ও ফেরদৌস আরা, গবেষণায় মঈদুল হাসান, শিক্ষায় ড. নিয়াজ জামান, আলোকচিত্রে নাসির আলী মামুন ও চিত্রকলায় রোকেয়া সুলতানা, সাংবাদিকতায় মাহফুজ উল্লাহ (মরণোত্তর), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মেহদী হাসান খান (দলনেতা), রিফাত নবী (দলগত), মো. তানবিন ইসলাম সিয়াম (দলগত) ও শাবাব মুস্তাফা (দলগত)। এছাড়া সমাজসেবায় মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী (মরণোত্তর), সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারে মাহমুদুর রহমান, ভাষা ও সাহিত্যে হেলাল হাফিজ (মরণোত্তর) ও শহীদুল জহির {মো. শহিদুল হক (মরণোত্তর)}, সংস্কৃতি ও শিক্ষায় ড. শহিদুল আলম এবং ক্রীড়ায় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল।

About The Author

শেয়ার করুন