আবারও শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি

12

শ্রীলঙ্কায় তীব্র অর্থনৈতিক সংকটকে কেন্দ্র করে বাড়তে থাকা সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবেলায় পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসা। গতকাল শনিবার গভীর রাতে জরুরি অবস্থা জারির পর থেকেই তা কার্যকর হবে বলে এক ঘোষণায় জানিয়েছে দেশটির সরকার। প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “শ্রীলঙ্কার জরুরি পরিস্থিতির কারণে এবং জননিরাপত্তা, শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনসাধারণের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও পরিষেবা বজায় রাখতে প্রেসিডেন্ট এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” প্রেসিডেন্টের এ আদেশ ৩০ দিনের মধ্যে পার্লামেন্টের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সর্বশেষ এ জরুরি অবস্থায় কী কী বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে তার বিস্তারিত বিবরণ এখনও প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু এর আগের জরুরি অবস্থায় সামরিক বাহিনী মোতায়েন, কোনো অভিযোগ ছাড়াই লোকজনকে গ্রেপ্তার ও বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দেওয়াসহ প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার পরিধি বাড়ানো হয়েছিল। এবার এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই তার নিন্দা জানান দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা ও শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূত।

গোটাবায়াকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে সাজিথ বলেন, “সঙ্কটের সমাধান খোঁজার বদলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।” জরুরি অবস্থা জারির এ সিদ্ধান্তকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে অভিহিত করেছেন কানাডার রাষ্ট্রদূত ডেভিড ম্যাককিনন। “গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শ্রীলঙ্কাজুড়ে চলা বিক্ষোভে নাগরিকরা ব্যাপকভাবে অংশ নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করছিল, এতে দেশের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছিল।” এনডিটিভি জানিয়েছে, গত শুক্রবার একদল শিক্ষার্থী পার্লামেন্টে হামলা চালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ ফের কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে ও জলকামান ব্যবহার করে। প্রেসিডেন্ট ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এ দিন থেকে দেশটির সরকারি ও বেসরকারি খাতের কর্মীদের শুরু করা ধর্মঘটে দ্বীপটি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।

ধর্মঘটের কারণে গত শুক্রবার শ্রীলঙ্কাজুড়ে হাজার হাজার দোকান, স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। কলম্বোর প্রধান রেলস্টেশন বন্ধ ছিল। নিকটবর্তী টার্মিনাল থেকে শুধু কিছু সরকারি বাস চলাচল করেছে। দেশটির স্বাস্থ্যকর্মীরাও ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। তবে হাসপাতাগুলোতে জরুরি পরিষেবা অব্যাহত ছিল। কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র আর্থিক সংকট মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কা। কোভিড-১৯ মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বাড়তে থাকা তেলের মূল্য ও প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া সরকারের কর হ্রাসের সিদ্ধান্তে মারাত্মক অর্থ সংকটে পড়েছে দেশটি।

চলতি সপ্তাহে দেশটির অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ব্যবহার করার মতো মাত্র ৫ কোটি ডলার রিজার্ভ আছে শ্রীলঙ্কার। ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি ও আমদানীকৃত খাদ্য, জ¦ালানি ও ওষুধের সংকটের কারণে দ্বীপটিতে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে, যা কখনো কখনো সহিংসতায় রূপ নিচ্ছিল। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট ও সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন, পরিবর্তে তার নেতৃত্বে ঐক্য সরকার গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আর এখন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দেশব্যাপী ধর্মঘট মোকাবেলার কৌশল নিয়েছেন তিনি। এর আগে ১ এপ্রিল আরেকবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। তখন পাঁচ দিন পর জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয়েছিল।