কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি ও আমকে ঘিরে একটি কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে। কেননা, আজকের কৃষি যন্ত্রনির্ভর হয়ে যাচ্ছে, কাজেই কৃষিতে দক্ষ আমাদের জনবল প্রয়োজন। এখানে একটি কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হলে এই এলাকার কৃষক কারিগরি তথা প্রযুক্তিগত শিক্ষা গ্রহণ করে কৃষিতে কাজে লাগাতে পারবে। এ সময় তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের চার সংসদ সদস্যের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা এ বিষয়ে উদ্যোগ নিলে আমি আপনাদের এ কাজে সহযোগিতা করব।
বৃহস্পতিবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন- ২০০৮ সালের নির্বাচনে আপনাদের বিপুল সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের মধ্যে দেশকে দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সেটা করেছে। ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে। এখন শাকসবজি, ফল তথা পুষ্টিবিষয়ক খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এবার দেশে ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন শাকসবজি উৎপাদন হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেনÑ এই জেলার আম দুই মাস পর্যন্ত সংরক্ষণের জন্য চেষ্টা চলছে, কেউ যদি ব্যক্তি উদ্যোগে সংরক্ষণাগার করতে চান তাহলে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে কম সুদে টাকার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আমের প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর গুরুরাত্বরোপ করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জকে আমের রাজধানী উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেনÑ আমকে বাণিজ্যিকীকরণের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। এখানকার আম সুমিষ্ট, স্বাদেগুণে ভরা। আগের তুলনায় উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন হচ্ছে, কাটিমন আম বছরে তিনবার উৎপাদন হচ্ছে। এখন সরকার আমের রপ্তানি বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। আমাদের বিজ্ঞানীরা অনেক উন্নত জাতের আম উদ্ভাবন করেছেন।
তিনি বলেনÑ বিএনপি যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই কৃষিতে বিপর্যয় ঘটে। তারা সারের জন্য কৃষককে হত্যা করেছিল, এই চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যুৎ চাওয়ায় কৃষকদের হত্যা করেছিল। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতত্বাধীন সরকার কৃষিতে ভর্তুকি দিচ্ছে, প্রণোদনা দিচ্ছে, কৃষককে ন্যায্যমূল্যে সার ও বীজ দিচ্ছে।
ড. রাজ্জাক বলেন- ২০০৮ সালে দেশের সবচেয়ে স্বচ্ছ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। সেটাও বিএনপি মানেনি। সেদিন থেকেই তারা আন্দোলন শুরু করেছে। তারা নিজেদের কবর নিজেরাই খুঁড়েছে। সেই কবর থেকে আর উঠতে পারবে না। মন্ত্রী বলেন- বিএনপি-জামায়াত ২০১৪ সালে বাড়িতে আগুন দিয়েছে, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। পাকবাহিনীর চেয়েও বর্বর, নির্মম ও নিষ্ঠুর বিএনপির সন্ত্রাসী কার্যক্রম। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশে অরাজকতা হয়নি। জামায়াত যদি আবার কোনো অরাজকতা সৃষ্টি করে, জ্বালাও-পোড়াও করে তাহলে ১৯৭১ সালের মতো যেভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করা হয়েছিল ঠিক সেভাবেই তাদেরকে পরাজিত করা হবে, আবার কোনোরকম সন্ত্রাসী কার্যক্রম করলে জামায়াতের শেকড় উপড়ে ফেলা হবে।
কৃষি সচিব ড. ওয়াহিদা আক্তারের সভাপতিত্বে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য দেনÑ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল ওদুদ, শিবগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার, জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন, আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুখলেসুর রহমান।
এর আগে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কেন্দুয়া গ্রামে রফিকুল ইসলামের তিনশ বিঘার ফার্মিএগ্রো নামের আমবাগান পরিদর্শন করেন এবং আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এরপর তিনি জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট এলাকায় অবস্থিত আজান ইন্টারন্যাশনালের মাল্টি কোল্ডস্টোরেজ এবং ছত্রাজিতপুরে পলিনেট হাউজ পরিদর্শন করেন।
এসময় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (গবেষণা অনুবিভাগ) রেহানা ইয়াসমিন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. ছাইদুল হাসান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার, নাচোল উপজেরা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদেরসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।