স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং শিক্ষার বৈষম্য দূরীকরণের মূল দাবিসমূহের ওপর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নয়ানশুকা আর.কে. উচ্চ বিদ্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ও স্বাশিপের জেলা সভাপতি এবং শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ’র সভাপতি তারিক-ই-নূর জামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেনÑ স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেনÑ স্বাশিপের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সলিমুল্লাহ সেলিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ’র সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেনÑ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাবেক শিক্ষক নেতা বালুগ্রাম আদর্শ কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান, শিক্ষক নেতা জুয়েল ইসলাম, মো. শহিদুল্লাহ, খালেদা আখতার কাকলী।
সভায় স্থানীয় শিক্ষক ও কর্মচারী নেতারা শিক্ষাকে জাতীয়করণের দাবি জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেনÑ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ব্রিটিশরা দুইশো বছর আর পাকিস্তানিরা ২৩ বছর এদেশের মানুষকে শাসন ও শোষণ করেছে। রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকহানাদার বাহিনী এদেশের বদ্ধিজীবীদের হত্যা করে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করে দিতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধু জানতেন জাতিকে শিক্ষিত করতে না পারলে দেশকে এগিয়ে নেয়া যাবে না, শিক্ষকদের পেটে ক্ষুধা রেখে সোনার বাংলা গড়তে সোনার মানুষ তৈরি করা যাবে না। তাই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে প্রথম ৩৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছিলেন, ১ লাখ প্রাথমিক শিক্ষককে জাতীয়করণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন পর্যায়ক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করবেন। তিনি বলেন, শিক্ষকদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্টের চিন্তা বঙ্গবন্ধুর মাথা থেকে এসেছিল। কিন্তু ৭৫ এর ১৫ আগস্ট রাতের অন্ধকারে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। তারপর অনেক ইতিহাস হয়ে গেল।
সাজু বলেনÑ স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ্্যাপন করেছে জাতি। এই ৫০ বছরের মধ্যে ২০টি বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এই সময়ে শিক্ষকদের যে উন্নয়ন হয়েছে তা বাকি ত্রিশ বছরেও হয়নি। তিনি বলেনÑ আন্দোলন ছাড়া শিক্ষকদের দাবি একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারই পূরণ করেছে। তিনি আরো বলেন, ১৯৯০ সালের ১ জুলাই শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট গঠিত হয়। কিন্তু সে সময়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসে আমাদের সংগঠনের সকল ধরনের কাজ স্থগিত করে দেয়। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে আবারো সংগঠনকে চাঙ্গা করা হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে আবারো সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ফলে আমরা আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। বিএনপি সরকারের আমলে শিক্ষকরা যখন আন্দোলনে মাঠে নেমেছিল, তখন শিক্ষকদের লাঠিপেটা করে রক্তাক্ত করা হয়েছিল। আমাকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল। বর্তমান সরকার আমাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। আমাদের বেতনভাতা বাড়িয়েছে। আমরা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।
শাহজাহান আলম সাজু সংগঠনের ৮টি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলোÑ এক. ঐতিহাসিক মুজিববর্ষেই শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের ঘোষণার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সর্বজনীন বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা। দুই. আসন্ন ঈদের পূর্বেই পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা প্রদান এবং সরকারি অনুরূপ বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা প্রদানের জন্য আসন্ন বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা। তিন. সরকারি সকল শর্তপূরণ করে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি (স্বতন্ত্র এবতেদায়ী, অনার্স/মাস্টার্সসহ) প্রতিষ্ঠানকে অতিদ্রুত এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা করা এবং বেসরকারি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সরকারি অনুরূপ ৬ষ্ঠ গ্রেডের বেতন স্কেল প্রদান। চার. শিক্ষা প্রশাসন, শিক্ষা বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয়, মাউশিসহ বিভিন্ন অধিদপ্তর ও শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের অবিলম্বে প্রত্যাহার করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সৎ এবং যোগ্য ব্যক্তিদের পদায়ন করা। পাঁচ. করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা / বিশেষ বৃত্তি / অনুদান প্রদান সকল। শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ডিভাইস, খাতা-কলমসহ অন্যান্য শিক্ষাসামগ্রী প্রদান এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের (স্কুল, মাদরাসা, ভোকেশনাল) স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে দুপুরে সরকারি উদ্যোগে খাবার সরবরাহ করা। ছয়. শূন্য পদের বিপরীতে ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা কার্যকর করা। সাত. অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারীদের শেষ ভরসাস্থল শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর বোর্ডের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা। আট. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং ব্যবস্থাপনা কমিটিতে সৎ, যোগ্য ও শিক্ষাবান্ধব ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা; স্কুলপর্যায়ে ন্যূনতম ডিগ্রি পাস ও কলেজ পর্যায়ে নন-মাস্টার্স পাস স্বচ্ছ ইমেজসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগদান করা।
তিনি পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধি ও শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে জাতীয় স্বার্থে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণসহ এ আট দফা দাবি বাস্তবায়নে স্বাশিপের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য শিক্ষক সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
সভা সঞ্চলনা করেন শিক্ষক সমিত চট্টোপাধ্যায় ও নুর নাহার। স্বাশিপ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা এই সভার আয়োজন করে।