আগামীকাল কবি বেগম সুফিয়া কামালের ১০৯তম জন্মদিন

34

জননী সাহসিকা হিসেবে খ্যাত কবি বেগম সুফিয়া কামালের ১০৯তম জন্মদিন ২০ জুন শনিবার। ১৯১১ সালের এ দিনে বেলা ৩টায় বরিশালের শায়েস্তাবাদস্থ রাহাত মঞ্জিলে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
কবি সুফিয়া কামালের ১০৯তম জন্মদিন উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ, প্রকৃতি, গণতন্ত্র, সমাজ-সংস্কার, নারীমুক্তি এবং শিশুতোষ রচনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বেগম সুফিয়া কামালের লেখনী আজও পাঠককে আলোড়িত ও অনুপ্রাণিত করে। তিনি বলেন, ‘কবি বেগম সুফিয়া কামালের সৃজনশীলতা ছিল অবিস্মরণীয়। দেশ, প্রকৃতি, গণতন্ত্র, সমাজ-সংস্কার, নারীমুক্তি এবং শিশুতোষ রচনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার লেখনী আজও পাঠককে আলোড়িত ও অনুপ্রাণিত করে।’
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার চিন্তাধারা কবি সুফিয়া কামালের জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। তার দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রীনিবাসের নাম ‘রোকেয়া হল’ রাখা হয়।
সুফিয়া কামাল ছিলেন আবহমান বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি। অন্যদিকে বাংলার প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ছিল তার আপোসহীন এবং দৃপ্ত পদচারণা। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এই আন্দোলনে নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৫৬ সালে শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
পাকিস্তান সরকার ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র সংগীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে সুফিয়া কামাল জড়িত ছিলেন। তিনি ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭০ সালে তিনি মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে নারী জাগরণ ও নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণসহ কারফিউ উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেন। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন তিনি।
সাঁঝের মায়া, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। এছাড়া সোভিয়েতের দিনগুলি এবং একাত্তরের ডায়েরী তার অন্যতম ভ্রমণ ও স্মৃতিগ্রন্থ।
সুফিয়া কামাল দেশ-বিদেশের ৫০টিরও বেশি পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, সোভিয়েত লেনিন পদক, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ও স্বাধীনতা দিবস পদক।
মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির সমস্ত প্রগতিশীল আন্দোলনে ভূমিকা পালনকারী সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর শনিবার সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার ইচ্ছানুযায়ী তাকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।