আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা এসএম কামাল হোসেন বলেছেন, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুটি আসনে উপনির্বাচন। কারণ, বিএনপির নেতারা পদত্যাগ করেছেন। শেখ হাসিনা হচ্ছেন নৌকার মালিক। এ দুটি আসনে মু. জিয়াউর রহমান ও আব্দুল ওদুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকা তুলে দিয়েছেন। তাই আমি জিয়াউর রহমান বা ওদুদ সাহেবের জন্য কথা বলতে আসিনি। আমি এসেছি নৌকার পক্ষে কথা বলার জন্য। যে নৌকা মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক, স্বাধীনতার প্রতীক, যে নৌকা বঙ্গবন্ধুর প্রতীক, শেখ হাসিনার প্রতীক। নৌকা হারলে বাংলাদেশ হারে, মুক্তিযোদ্ধারা হারে, স্বাধীনতা হারে। দেখলেন না, ধানের শীষের মালিকরা বললেন ‘বাইচান্স স্বাধীনতা’। তাই নৌকা যদি হারে তাহলে আমি আপনি থাকার দরকার কী?
তিনি বলেন, নৌকার বিজয় আনতে না পারলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন কি জন্য? নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য? উপজেলা চেয়ারম্যান যদি নৌকাকে জেতাতে না পারেন তাহলে আপনার চেয়ারম্যান থাকে কিনা সন্দেহ। শালিস করার জন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বানানো হয়নি, শেখ হাসিনার উন্নয়নের মহাযজ্ঞ মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য বানানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমি কোনো গ্রুপিং বুঝি না, আমি কোনো নেতা বুঝি না, আমি বুঝি নৌকা-নৌকা-নৌকা।
শনিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মু. জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেনÑ রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওদুদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. সামিল উদ্দিন শিমুল এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের এমপি ফেরদৌসী ইসলাম জেসী, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. মোখলেসুর রহমান এবং বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। সম্মেলনে বিভিন্ন উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বক্তব্য দেন।
আগামী ২৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজশাহী সফর ও আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ৪৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) ও ৪৪, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসনে উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে বেলা ১১টায় এই প্রতিনিধি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বিদ্রোহী নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সাংগঠনকি সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, বিএনপির সাথে যতই প্রেম করেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না থাকলে সেই প্রেম টিকে থাকবে না। এই নির্বাচন শুধুই নির্বাচন না, এই নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক। আসল নির্বাচন ২০২৩ সালের শেষে অথবা ২০২৪ সালের প্রথমে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এই উপনির্বাচনে নৌকা হেরে গেলে বিএনপি সুযোগ পাবে। বিএনপি-জামায়াতকে বিশ্বাস করা যায় না। ওরা দেশের ভালো চায় না। বিএনপি-জামায়াতের সাথে যতই সম্পর্ক করুন না কেন, সুযোগ পেলেই ছোবল মারবে। তিনি বলেন, বিএনপি বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়, বিএনপি স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্বাস করে না, বাংলাদেশ মাথা উঁচুর করে দাঁড়াক বিএনপি তা চায় না। কারণ বিএনপির জন্মই হয়েছে বাংলাদেশের বিরোধিতা করার জন্য। এসময় তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর জিয়াউর রহমানের গণভোটের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আজ বিএনপি নেতা মক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বিদ্রুপ করছেন।
নৌকার পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কাজ না করলে গুনাহ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে জেতার বিকল্প জেতা। এর কোনো বিকল্প নেই। সকলকে নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। আমি কয়েকজনের ব্যাপারে জানি, তাদের এলাকায় ভোটের মাধ্যমে নৌকাকে জেতাতে হবে।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে এসএম কামাল বলেন, ধানের শীষ মসজিদ দেয়নি, কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দেয়নি। অন্যদিকে সারাদেশে ৫৬০টি মসজিদ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যার ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। অপর দিকে ধানের শীষ কি দিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২১ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছে, কৃষকের সার লুটপাট করেছে ধানের শীষের ডিলাররা, বাংলাভাই সৃষ্টি করে মানুষকে নির্যাতন করেছে, দেশের ৬৩ জেলায় ৫০০ বোমা হামলায় রক্তাক্ত করেছে, সারাদেশকে খুনের রাজ্যে পরিণত করেছে। বিএনপির আমলের ২০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার ৪৪৩টি প্রকল্পের হদিস নেই, লুটপাট করে নিয়েছে। ধানের শীষ জিয়া পরিবারকে বিশ্বে ৩টি শ্রেষ্ঠ দুর্নীতিবাজ পরিবারের অন্যতম পারিবার বানিয়েছে।
করোনা মহামারির সময় ধানের শীষের লোকেরা জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি উল্লেখ করে এসএম কামাল বলেন, নৌকার লোকেরা দাঁড়িয়েছে। যাদের ঘর নেই বাড়ি নেই তাদেরকে ঘরবাড়ি করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাহলে নৌকা কেন ভোট পাবে না। কারণ, এ ব্যর্থতা আমাদের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। আপনারা নৌকার উন্নয়নের কথা বলতে পারেননি, মানুষকে বোঝাতে পারেননি। আমরা যদি মানুষের কাছে যায় এবং ধানের শীষের আমল আর নৌকার আমলের কথা বলি, আমরা যদি বলি নৌকায় ভোট দিলে মানুষ বঞ্চিত হয় না, মানুষ সুখে শান্তিতে থাকে তাহলে মানুষ নৌকায় ভোট দিবে। তিনি বলেনÑ সারাবিশ্ব বলছে বিশ্বে ১ নম্বর প্রধানমন্ত্রী হচ্ছে শেখ হাসিনা, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে সারাবিশ্বে মানবতার মা হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ধানের শীষের মালিকরা লুটপাট, খুন, দুর্নীতি ছাড়া জনগণের জন্য কিছুই করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা গর্ব করে বলতে পারি নৌকার মালিক শেখ হাসিনা সততার দিক দিয়ে বিশ্বে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী, মানবতার দিক দিয়ে বিশ্বের প্রথম প্রধনমন্ত্রী। বিশ্ব তাক লাগানোর মতো উন্নয়নের বছর ছিল ২০২২ সাল।
মানুষ ভালো থাকুক এটা বিএনপি চায় না জানিয়ে এস এম কামাল বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন ধানের শীষের মালিক বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, পদ্মা সেতুর দরকার নেই, আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতু করতে পারবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পদ্মা সেতু হয়েছে। খুলনা বরিশাল যেতে যেখানে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা সময় লাগত এখন সেখানে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টায় মানুষ ঢাকা থেকে যাতায়াত করতে পারেন। কে করেছেন, প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা করেছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মেট্রোরেল করেছেন, ২০২২ সালে ১০০টি সেতু ও ১০০টি সড়ক উদ্বোধন করেছেন। বছরের শুরুতে ৪ কোটি ২৭ লাখ শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
Home চাঁপাইনবাবগঞ্জ গোমস্তাপুর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সম্মেলনে এসএম কামাল মানুষ ভালো থাকুক এটা বিএনপি চায়...