সংস্কার করলে হতে পারে আধুনিক বিনোদন স্পট
দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে একটা নদী। কিন্তু আসলে এটা চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার আজাইপুর-শংকরবাটি বিল। এর পানি দিয়েই দৈনন্দিন চাহিদা মেটায় পৌরসভার ১০ থেকে ১১ টি মহল্লার মানুষ। কিন্তু সংস্কারের অভাবে পুরো বিল ছেয়ে গেছে কচুরিপানায়। দীর্ঘদিন এ অবস্থায় থাকার কারণে বিলের পানি এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওইসব মহল্লার মানুষ। বিলটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন না থাকায় মশার উপদ্রবে তারা অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে সদর আসনের সংসদ সদস্য ও স্থানীয়দের উদ্যোগে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বিলের কচুরিপানা অপসারণ করা হলেও নিয়মিত দেখাশোনার অভাবে প্রাচীন এ বিল আবারো ছেয়ে যায় কচুরিপানায়। প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ও কোয়ার্টার কিলোমিটার প্রশস্ত এই ঝিলটির অবস্থান শহরের শান্তির মোড় থেকে একেবারে বটতলা হাট পর্যন্ত বিস্তৃত। এ বিলটি সংস্কার করলেই শহরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিনোদন কেন্দ্রসহ বছরে কয়েক কোটি টাকার মাছ চাষ করা সম্ভব বলে অনেকেই মনে করেন।
আজাইপুর বিল সংষ্কার কমিটির আহবায়ক শহীদুল হুদা অলক জানান, বিশাল এ বিলটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে বিলটি সংস্কার করা হয়। সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ এর উদ্বোধন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে বিলটি আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।
সরজমিনে দেখা যায় বিশাল বিলটির পুরোটাই এখন কচুরিপানায় ভর্তি হয়ে গেছে। দেখলে মনে হবে এটা কোন বিল নয়, একটা বিশাল খেলার মাঠ। যতদূর চোখ যায় শুধু কচুরিপানা আর কচুরিপানা।
বিল সংস্কার কমিটির আহবায়ক শহীদুল হুদা অলক আরো জানান, সে সময় আমরা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম, সাবেক ছাত্র নেতা সামিউল হক লিটনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি করে বিলটি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করি। সমস্যার সমাধানে আমারা সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ এর স্মরণাপন্ন হলে তিনি আমাদের আড়াই লক্ষ টাকার ব্যবস্থা করে দেন। আর সামিউল হক লিটন দেন এক লক্ষ টাকা। বিশাল এ বিলের সংস্কারের জন্য সাড়ে তিন লক্ষ টাকা খুব সামান্য হয়ে পড়ে। যা পরবর্তীতে টাকার ভার আমার ঘাড়ে এসে পড়ে। তিনি আরো বলেন, শুধু বিল সংস্কার নয় আমরা পুরো বিলের পাড়ে লাইটের ব্যবস্থা করা, বিল খনন করা, বিলের পাঁচটি স্থানে সিঁড়ি ঘাট নির্মাণ করা, বিলের পাড়ে বৃক্ষ রোপন করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করি। কিন্তু যে টাকা পাওয়া গিয়েছিল তা কচুরিপানা পরিস্কার করতেই খরচ হয়ে যায়। পরবর্তীতে টাকার অভাবে ইচ্ছা থাকলেও আর কাজ করা যাচ্ছে না। বিলটির জন্য ঠিকমত টাকার বরাদ্ধ পেলে বিশাল এ বিলটি সংস্কার করে আধুনিক মানের বিনোদন কেন্দ্র তৈরি করা সম্ভব এবং মাছচাষ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করা যাবে বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, বিশাল এ বিলটির কচুরিপানা আগে পরিস্কার করতে হবে। সবার সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে আমরা একটা উদ্যোগ গ্রহণ করব।
এলাকাবাসী ডা. শহীদ, ছাত্র জামিল, মুদি দোকানী জামানসহ আরো অনেকে জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ বিলটি অতি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তারা বলেন কচুরিপানাতে ভর্তির কারণে মশার নিরাপদ আবাসল স্থান তৈরি হয়েছে। দিনে রাতে মশার উৎপাতে আমরা অতিষ্ঠ। তাছাড়া বিলটি সংস্কার করলে শহরে বড় ধরনের বিনোদন স্পট তৈরি হবে। সে ক্ষেত্রে পৌরসভা বিশাল রাজস্বও আয় করতে পারবে।
বিশাল আকারের এই বিলটি খুবই গভীর। এমনকি চৈত্র মাসেও এবিলে পানি ভর্তি থাকে। গভীরতার কারণে এপার হতে ওপার সাঁতরিয়ে পার হওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। বিশাল বিলটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংযোজন করতে পারলে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায় হবে বলে সকলে মনে করেন।